অনুপ্রবেশের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়

প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিক আইন প্রকাশের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে চলেছে। দিন দিন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বাড়ছে এমনই তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। গত দুই মাসে ৪৪৫ জনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। এ ঘটনা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ দাবি করে এমনটি বলছেন বিশ্লেষকরা। ভারত থেকে মানুষেরা উদ্বেগ-আতঙ্কে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। সীমান্ত পারাপারের ঘটনা একটা সাধারণ ঘটনা। সব সময় কিছুসংখ্যক মানুষ সীমানা অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশে যাতায়াত করে। কিন্তু এবারের অনুপ্রবেশের ঘটনাটি এমন একটা সময় বেশি করে হচ্ছে যখন ভারতের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা নাগরিকত্ব নিয়ে হুংকার দিচ্ছেন। এ হুংকারের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে চরম সাম্প্রদায়িক আচরণেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলেও আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ আগস্ট আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরপরই যে আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা, এখন তাই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। সেই সময়েই এটা বোঝা যাচ্ছিলো যে, এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে এমন লোকদের ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জোর করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ না নিলেও পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে যে, অনেকেই বিশেষ করে যারা মুসলিম জনগোষ্ঠীর সদস্য, ভীতি এবং চাপের মুখে বাংলাদেশেই আশ্রয় নিতে চাইবে। মূলত, অবৈধ নাগরিক বিতাড়নের নামে ভারতে যা করা হচ্ছে, তাতে একটি ভীতিকর পরিবেশই তৈরি হয়েছে সেখানে। ফলে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সতর্কতার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়।
তবে বিজিবি মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ভারতে নাগরিক আইন সংকট নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত যাতে অতিক্রম করতে না পারে। আমরা এটা সফলভাবেই করে যাচ্ছি। এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস) বা সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে গত ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে কোনো আলোচনাও হয়নি জানিয়ে দু দেশের সীমান্ত নিয়ে কোনো টেনশন নেই বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ্য করেছেন। ভারতে নাগরিক আইন নিয়ে সংকট তৈরির পর গত দু মাসে ভারত থেকে ৪৪৫ জন অনুপ্রবেশ করেছে এবং গত এক বছরে এর সংখ্যা প্রায় এক হাজার-এমন তথ্য জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরা সবাই বাংলাদেশি। যেসব বাংলাদেশি ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে তারা বিভিন্ন সময়ে দালালের মাধ্যমে কাজের সন্ধানে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন বা পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।
আবার এটাও জানা যায় যে, দেশের পশ্চিমাংশের সীমান্ত এলাকায় কারও রান্নাঘর বাংলাদেশে, আবার থাকার ঘর ভারতে। ভারতের অনেক প্রতিবেশীর বাড়ি বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের অনেক প্রতিবেশী বা নিকটাত্মীয়র বাড়ি ভারতে। এসব নাগরিক জরুরি প্রয়োজনে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে অংশ নিতে চায়। ভিসার পরিবর্তে তাদের জন্য অল্প সময়ের জন্য তাৎক্ষণিক পাস দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে। তবে অনুপ্রবেশকারীদের কাছে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণসাপেক্ষে বিশ্লেষকরা বলছেন, এনআরসি ও ভারতীয় স্থানীয়দের নির্যাতন আতঙ্কে অনেকে দেশ ছাড়ছেন। তারা এমন একসময় বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, যখন আসামে ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন অনুপ্রবেশ ইস্যুটি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, আসামের নাগরিকপঞ্জিতে বাদপড়া নাগরিকদের নিয়ে উদ্ভূত উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দু’বার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়েছে। দু’বারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বারবার এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে চলেছেন। বিষয়টি আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। তবে ভারত আশ্বস্ত করলেও, দেশের নীতিনির্ধারকদের কর্তব্য হওয়া দরকার অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধিসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কার্যকর নীতি গ্রহণ করা।