অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যদিয়ে চলছে দেশ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচি অর্ধশত দিন পেরিয়েছে। অবরোধের পাশাপাশি চলছে হরতালও। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ হাজার ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ সময় দেশব্যাপি বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শুধু পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৫৭ জন। ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ১৫। এর বাইরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও পিকেটারদের দুপক্ষের গোলাগুলি, গণপিটুনি, সংঘর্ষ ও হামলাসহ অন্যান্য ঘটনায় ৩৬ জন এবং পুলিশ ও ৱ্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন আরও ৩১ জন। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতিও বিপুল। এ অবস্থা কতোদিন চলবে কেউ জানে না। এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যদিয়ে চলছে দেশ। এ থেকে দ্রুত মুক্তি চায় মানুষ। যাদের হাতে এর কলকাঠি, তাদের বোধোদয় হবে কবে?

হরতাল-অবরোধের কারণে বারবার এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শুধু শিক্ষা নয়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের পরিবহন, পর্যটন, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, বীমাসহ প্রায় সব খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে স্বাভাবিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতায় আসার কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে- এ নিয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। ঢাকা চেম্বারের হিসেবে একদিনের হরতাল কিংবা অবরোধে আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ঢাকা চেম্বার, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির ১৬ খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা।

বস্তুত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠা শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, সমগ্র দেশবাসীরই। সহিংসতার ঘটনায় সাধারণ মানুষ শুধু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে না, আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব থেকে কৃষকরাও মুক্ত নয়। কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ উঠে না আসায় লোকসানের মুখে পড়ছে তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খুচরা বিক্রেতারাও। প্রতিদিনের আয়ের ওপর যাদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল, পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন ধারণ করা তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠেছে। সহিংসতায় বহু প্রাণহানি ছাড়াও দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হচ্ছে, তার ক্ষতিও কম নয়। সন্দেহ নেই, এ সবকিছুর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। মানুষের জানমালসহ অর্থনীতির আরও ক্ষতি এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অবিলম্বে সব ধরনের নেতিবাচক কর্মসূচি পরিহার করে সমঝোতার পথে অগ্রসর হওয়া। রাজনৈতিক নেতাদের এ বোধোদয় হোক।