অথচ দোষ নেবো না, তাই আবার হয়?

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির সাত ছাত্র ও দু ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ ওরা বেলেল্লাপনা করেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওদের বেলেল্লাপনা এলাকায় প্রকাশ পেলে অভিভাবকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। একাংশ বিক্ষোভ দেখায়। অভিযুক্তদের মধ্যে এক ছাত্রের পিতা বিদ্যালয়েরই সহকারী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধেও বিক্ষুব্ধরা উগরে দেয় ক্ষোভ। অভিযোগ, তিনি তার ছেলেকে সুপথে রাখতে পারেননি, উপরন্ত পিতার লাই পেয়েই একের পর এক অপরাধমূলক অপকর্ম করে চলেছে তার ছেলে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি তিন দিনের সময় দিয়ে সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধের সময় প্রাইভেট টিউশন নিতে গিয়ে সাত ছাত্র ও দু ছাত্রী এক শ্রেণিকক্ষে বেলেল্লাপনা করেছে। সেই দৃশ্য সেলফোন তথা মোবাইলফোনে ধারণ করেছে। সেটা প্রকাশ পাওয়ায় যতো বিপত্তি! ক্ষোভ আর পূর্বের হরেক বিরোধ একাকার।

 

সাত ছাত্র ও দু ছাত্রীকে বহিষ্কার নয়, বোধকরি ছাড়পত্র তথা টিসি দেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে তা এক অর্থে গুরুতর, অন্যার্থে তথ্যপ্রযুক্তির কুফল। ভুললে চলবে না, ওরা নবম শ্রেণির ছাত্র। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জিনগত কিছু বিষয় নিয়ে এলেও প্রজন্ম স্বভাব পায় মূলত পরিবার ও সমাজ থেকেই। অবশ্যই প্রজন্মের অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালয় তার পরিবার। তারপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজ। সময় বদলানোর ধারায় শিশুদের সুন্দর করে গড়ে তুলতে নানা নিয়ম, নানা বিধি-বিধানের খড়গ চাপানো হলেও শিশুদের রক্ষা করার মতো তথ্য প্রযুক্তির বাতাস বিশুদ্ধ করা হচ্ছে কি? বলা হচ্ছে, বিদ্যালয়ে বেত-কাঠি দূরাস্ত, শিক্ষার্থীদের দিকে কড়া নজরেও তাকাতে পারবেন না শিক্ষক। বোঝাতে হবে। সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে হবে। অথচ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া সেলফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে নীলছবি। এর কুপ্রভাব থেকে শিশু কিশোরদের রক্ষা করবেন কীভাবে? অবশ্যই অভিভাবকদেরই অধিক দায়িত্বশীল হতে হয়। সব সময়ই তা পূর্ণাঙ্গভাবে সম্ভব হয়? তাছাড়া কোনো পিতা-মাতাই কিন্তু সন্তানের অধপতন প্রত্যাশা করে না। যদিও আতিমাত্রায় আদরে আদরে বাদর হওয়ার উদাহরণ ভরি ভরি।

 

উঠতি বয়সীদের অন্যায়কে বড় করে দেখে অস্থিরতা সৃষ্টির চেয়ে তাদের সুধরে সুপথে নেয়ার পথে হাঁটাই শ্রেয়। যারা উঠতি বয়সী ওদেরকে নিজের সন্তানের দৃষ্টিতেই দেখা দরকার। তবে হ্যাঁ, নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র-ছাত্রী যা করেছে তা রক্ষণশীল সমাজে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া অসম্ভব। মূলত সে কারণেই অভিভাকদের অনেকেই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের তপ্ত রাস্তায় অভিভাবক আবরণে উৎসুক কেউ যে ছিলেন না তা যেমন নয়, তেমনই ওই পায়ের ভিড়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও ছিলো। তা না হলে ছাড়পত্রের চেয়ে সুধরানোর দাবিই অধিক গুরুত্ব পেতো নাকি? অবাধ তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক দিকগুলো কখন যে কার ছেলেমেয়েকে বিপথে টেনে নেয় কে জানে?  তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গিরও বদল। পশ্চিমা বাতাস গায়ে মাখবো, অথচ দোষ নেবো না- তাই আবার হয়?