অচেনা কাউকে নিয়ে আতিথেয়তায় মাতামাতি এবং বর্তমান

 

পরিচিত-অপরিচিতের সাথে এখটু বেশি খাতির জমানো, আশ্রয় প্রার্থীকে আতিথেয়তায় ভরিয়ে রাখা মূলত বাঙালি-আনারই অংশ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ যে প্রতারণার ফাঁদ পাতে না, পাতছে না, তা নয়। সে কারণেই অপরিচিত কেউ বিপদেও আর আশ্রয় পাওয়ার মতো থাকছে না। কীভাবে থাকবে? আতিথেয়তা নিয়ে যদি সন্তান অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তা হলে কি কাউকে বিশ্বাস করা যায়?

 

বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে চেনা-অচেনা কেউ পানি চাইলেও তাকে শুধু পানি দেয়া হয়নি। মুড়ি-মুড়কিসহই পরিষ্কার জাগ গ্লাসে পানি দিয়ে গৃহিণী থামেননি, বাড়ির শিশু-কিশোরদের দিয়ে কুশলটাও জানতে ভুল করেননি। আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে? কাবুলিওয়ালারও বৈঠকখানায় ঠাঁই দিয়ে জামাই আদরে খাইয়েছেন। এখন? দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সেই আতিথেয়তা। কেন? বাঙালির ঐতিহ্যবাহী আতিথেয়তা তথা সরলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকচক্র একের পর এক আঘাত করেছে। অতো আঘাতে অচেনা কারোর সাথে অতো আতিথেয়তার মানসিকতা কি থাকে? নেই। এরপরও অনেকে অচেনাদেরকে বিশ্বাস করে চরম মূল্য দিচ্ছেন। যেমন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কোষাঘাটা গ্রামের প্রতিবেশীর বাড়ির ভাড়াটে এক শিশুকে মুজিবনগর বেড়াতে নেয়ার কথা বলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টায় মেতে ওঠে। অপহরক অবশ্য ধরা পড়েছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অপহৃত শিশুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এ সফলতার জন্য অবশ্যই দামুড়হুদা থানা পুলিশ সাধুবাদ পাবার দাবি রাখে। দক্ষ চৌকস কর্মকর্তাদের অভিবাদন।

 

যারা বাড়ি ভাড়া নেয় তারা তো অচেনাই থাকে। সে কারণেই ঢাকাসহ সারাদেশেই বাড়ি ভাড়ায় নেয়া পরিবার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানায় তথ্য দেয়ার বিধান রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ারও তাগিদ দেয়া হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য নাগরিক পরিচয়পত্র তথা ভোটার পরিচয়পত্রটি দেখা এবং যাচাই করা জরুরি। দামুহুদার কোষাঘাটা গ্রামে যখন মকবুলকে বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়, তখন নিশ্চয় ওসব কিছু দেখা হয়নি। দেখা হলে শিশু অপহরণকারী কি বাড়ি ভাড়া নেয়ার সুযোগ পেতো? আকুব্বরের বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে বসবাস শুরু করে প্রতিবেশীদের বিশ্বাস স্থাপনের মতো আচরণ করেই সুযোগ বুঝে শিশু অপহরণ করেছে প্রতারক। প্রতারণার পর বাড়ি ভাড়ায় দেয়া বাড়িওয়ালা এবং প্রতিবেশীদের ঘোর কেটেছে। এটা যে চরম শিক্ষা তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। যদিও ক’জনই আর এ থেকে শিক্ষা নেয়? দামুড়হুদারই দর্শনার একটি মহল্লায় স্বামী-স্ত্রী সেজে প্রতারক জুটি বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে প্রতিবেশীদের কীভাবে ঘুম পাড়িয়ে মালামাল নিয়ে সটকেছে তা এলাকাবাসীর নিশ্চয় অজানা নয়। পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিতও হয় ওই ঘটনা। সে থেকে শিক্ষা নিলে কোষাঘাটার আকুব্বর কি অচেনা কারো পরিচয় যাচাই না করেই বাড়ি ভাড়ায় দিতেন?

 

আশেপাশেই প্রতারক। বাঙালি-আনার সেই আতিথেয়তার যুগ কালের গহ্বরে হারাতে বসেছে। প্রতারিত হওয়ার পর হায় হায় করে কপাল চাপড়ানোর চেয়ে আগেই সতর্ক হওয়া জরুরি। কোষাঘাটা থেকে শিশু অপহরণের পর প্রতারক অপহরকের অবস্থান শনাক্ত করা সহজ হয়েছে পুলিশি তৎপরতা ও প্রযুক্তির বদৌলতে। অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃতকে। ধরা পড়েছে বিশ্বাসঘাতক অপহরক। তার উচিত শাস্তিই কাম্য।