৪৫ বছর আত্মগোপনে থাকা ঝিনাইদহের আলোচিত চরমপন্থি নেতা আনোয়ার হোসেন দেবুর মৃত্যু

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ৬৭ বছর জীবনে ৪৫ বছর ধরেই আত্মগোপন থাকা ঝিনাইদহের এক চরমপন্থি নেতার মৃত্যু হয়েছে। আনোয়ার হোসেন দেবু (৬৭) নামে এই চরমপন্থি নেতা রোববার রাতে রাজবাড়ি সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। তিনি ভরতপুর গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে। মৃতুকালে তিনি স্ত্রী, ৬ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ও স্থানীয় মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খরুশিদ আলম জানাযার নামাজে শরীক হন। আনোয়ার হোসেন দেবুর একমাত্র ছেলে রাসেল জানান, মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববরার রাতেই তার পিতার মরদেহ গভীর রাতে বাড়িতে আনা হয়। তার পিতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে রাসেল জানান।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন দেবু যুবক বয়সে মাঠে কৃষি কাজ ও রাস্তায় মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর চরমপন্থায় উদ্বুব্ধ হয়ে ২২ বছর বয়সে যোগ দেন বিপ্লবী কমিউনিষ্ট (হক গ্রুপ) পার্টিতে। গোপন সংগঠনে তার নাম হয় দেবু। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে দেবু বাহিনী নিয়ে ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলে ঘাটি তৈরি করেন। চরমপন্থি দলগুলোর বহুধা বিভক্তির কারণে আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পূর্ববাংলা ও সর্বহারা পার্টির সাথে বহু বন্দুকযুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা শোনা যায়। অল্পদিনে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে জেলার আন্ডারগ্রাউন্ড মহলে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থিদলের আত্মসমর্পণ পক্রিয়ার সমন্বয়কারী মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেবু ২০০০ সালে আত্মসর্পণ করেন। তারপর শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের গোপন সংগঠন গণমুক্তি ফৌজে যোগদান দেন। কিছুদিন তিনি জনসমক্ষে চলাফেরা করলেও আবারো আত্মগোপনে চলে যান।

পুলিশ ও র‌্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর আধুনিকায়নের ফলে জেলাব্যাপী চরমপন্থি দমনে ব্যাপক অভিযান শুরু হলে দেবু আবারো আত্মগোপনে চলে যান। এ সময় তিনি ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। আনোয়ার হোসেন দেবুর অনেক সহযোগী পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে নিহত হয়। এমনকি তার ভাই তপু ঝিনাইদহ শহরের কেসি কলেজের সামনে থেকে অপহরণ হওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দেবু রাজবাড়ি এলাকায় আত্মগোপন করে ছিলেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর আত্মেগোপনে থাকা পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন দেবুর অবশেষে গোপন রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ চরমপন্থি নেতা দেবুর মৃতদেহ দেখার জন্য ভরতপুর গ্রামে ভিড় জমাতে থাকে।