২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ : বিবৃতি পাল্টা বিবৃতি

বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে এখন কৌশলী

 

স্টাফ রিপোর্টার: ২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী গ্রেফতার অভিযান। গ্রেফতার এড়াতে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরাও কৌশলী হয়ে উঠেছে।  অপরদিকে ২৫ অক্টোবর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ, বিবৃতি পাল্টা বিবৃতি। তবে এ আলোচনা-সমালোচনা আর হুমকি-ধামকির বিষয়টিকে চায়ের কাপের ঝড় বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না। বড় দু দলই নিজ নিজ অবস্থানকে আরো সংহত করার দিকে যথেষ্ট মনোযোগী। তাই বিরোধীদল যেমন ২৫ অক্টোবরের পর কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারও তাদের কথিত নৈরাজ্য দমনে কঠোর মনোভাব নিয়ে এগুচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এরই আলামত ইতিমধ্যে দৃশ্যমানও হচ্ছে।

জানা গেছে, ২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে দেশব্যাপি শুরু হয়েছে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। ২৫ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। নেতারা সভা সমাবেশে ওই দিনটি নিয়ে মাঠ গরম রাখার বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না, এমন গরম বক্তব্যে দেশব্যাপি উত্কণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ওই দিন কী হবে? এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে, হাট-বাজারে কিংবা চায়ের দোকানে চলছে জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো যে কোনো উপায়ে নির্বাচন করবে। অপরদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন ঠেকানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য হচ্ছে বিএনপির ব্যানারে কিংবা দলটির কাঁধে ভর করে অন্য কোনো দল বা গোষ্ঠী বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই অভিযান শুরু। যারা ওই সব ঘটনা ঘটাতে পারে সে সব সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ভোটকেন্দ্র দখল করার জন্য নিজ এলাকার নেতৃত্বদানকারী নেতা কর্মীদের টার্গেট করে গ্রেফতার অভিযান চলবে, এমন তথ্য বিভিন্ন এলাকা থেকে জানা যায়। পুলিশ ও ৱ্যাব থেকে বলা হয়, জঙ্গি কানেকশনে জড়িত নেতাকর্মীদের প্রতি নজরদারি রাখা হচ্ছে। অনুসন্ধান ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের। রাজধানীসহ দেশের যেসব এলাকায় নাশকতা কিংবা সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে সব এলাকার বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। ৱ্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে উত্কণ্ঠার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা দরকার তা করা হবে বলেও তিনি জানান।

পুলিশ সূত্রে বলা হয়, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কিংবা এমপি ব্যক্তিগত শত্রুতা, দলীয় কোন্দল, জমিজমা নিয়ে বিরোধসহ নানা আক্রোশে প্রতিপক্ষকে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী বলে গ্রেফতার করিয়ে দিতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এমন তথ্য এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ২৫ অক্টোবর কিংবা পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সে সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে বলে এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান। পরিস্থিতি ঘোলাটে করার কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটানোর উত্সগুলোকে গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছে। এগুলোর মধ্যে বোমাবাজি, ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও এবং শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের হত্যা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গেছে। এ সব বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ২৫ অক্টোবর নিয়ে কোনো ধরনের বিচলিত নন তারা। মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা হবে। ২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে ধড়-পাকড় সম্পর্কে আইজিপি বলেন, পুলিশের অপরাধ দমনে বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক তল্লাশি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।