২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহবুবের পরিবারের দাবি – মাহবুবের নামে স্কুলের নামকরণ ও কবর সংরক্ষণ

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টাকায় আমাদের সংসার চলে। ২০১৪ সালে সরকার কর্তৃক দেয়া ৫ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্রের মাসিক লাভের টাকা আর প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে দেয়। এতেই চলে আমাদের সংসার।’ এমন কথা জানালেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশের গ্রেনেড হামলায় নিহত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী শহীদ মাহবুবুর রশিদের পিতা হারুন-অর-রশিদ।

তিনি জানান, ‘আগস্ট মাস আসলেই সবাই মনে করে মাহবুবের কথা। তার আগে তো কেউই মাহবুবের পরিবারের খোঁজ নিতে আসে না। আমরা কি করছি, কি খাচ্ছি, কিভাবে বেঁচে আছি তার খোঁজ কেউ রাখেন? আপনারা এই দিন হলেই আসেন আমাদের বাড়িতে। এই টিভি, ওই টিভি, পত্রিকা আরও কতো কিছু। কিছুই তো হয় না। এসব করে লাভ কী আপনাদের? আর এসব বলেই বা কি হবে আমাদের, পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?’

তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই মাহবুব ছিলো খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কোনোদিন কারো সাথে কোনো ধরনের কথা-কাটাকাটিও হয়নি। এলাকার সকলের প্রিয় পাত্র ছিলো সে। অভাব আর অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলো সে। অনেক কষ্ট করেছে সে জীবনে। দেশের জন্য ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছে সে। মাহবুব আমার সন্তান ছিলো এ কথা ভাবতে আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়। আমি এমন এক সন্তানের পিতা যে তার নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মাহবুবের ছেলে-বৌ কোথায় থাকে আমি জানি না। শুনেছি তারা নাকি ঢাকায় থাকে। মাহবুবের বড় ছেলে আশিক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে আর ছোট ছেলে রবিন ডাক্তারি পড়ছে। এটাই জানি আর কিছু না। ওরা আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে না। সেই যে মাহবুব মরার সময় একবার এসেছিলো এই বাড়িতে আর তারা কেউ আসে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের কথা তো দুরের কথা মাহবুবের কবর পর্যন্ত দেখতে আসে না ছেলেরা।’ আমি কখন মরে যায় তার ঠিক নাই। আর কতোদিনই বা বাঁচবো। মরার আগে এই ছোট মেয়েটার বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি। এটাই এখন আমার চিন্তার কারণ। আর যে মাহবুব প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছে তার কবরটা অবহেলাতে পড়ে রয়েছে। ঝোপ-ঝাপের মধ্যে বোঝার উপায় নেই এটি কার কবর। নাই কোনো সাইন বোড। কবরের পার্শ্বে ফুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অন্তত এই বিদ্যালয়টি আমার ছেলের নামে নাম করণ করা হোক।

দলীয় নেতা কর্মীরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা করে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, এই এলাকার আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা করে না। যা করে সরকার। শুধু এই ২১ আগস্ট আসলেই মিলাদ দেয়ার জন্য শের দশেক জিলাপি কিনে দেয় তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমার চাওয়া আমার মাহবুবের কবরটা যেন সংস্কার করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মাহবুবের নামে নামকরণ আর ছোট মেয়েটার একটা চাকরির ব্যবস্থা করা বা বিয়ের ব্যবস্থা করা।

মাহবুবের মা হাসিনা খাতুন জানান, সেদিনের সেই হামলার কিছুদিন আগে মাহবুবকে একটি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকদিন ব্যবহার করে স্মৃতিস্বরূপ আমার কাছে দিয়ে যায় মাহবুব। ঘড়িটার দিকে তাকালেই মনে পড়ে আমার মাহবুবের কথা।

তিনি আরও জানান, ওই যে দেখছেন টিউবওয়েল শেষবার বাড়িতে এসে এটা দিয়েছিলো। বলেছিলো এবার প্লাস্টার করা হলো না। ঘুরে এসে প্লাস্টার করে দেবো। কিন্তু পরে আর ফিরে এলো না সে। তিনি জানান, আমি মাহবুবের মা এ কথা ভেবেই আমি গর্ববোধ করি।

মাহবুবের বোন আবিদা সুলতানা জানান, আপনাদের সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছা নেয়। আপনাদের বলা হয় এক আর আপনারা লেখেন আরেক। পরে আমাদের বিভিন্ন ঝামেলাতে পড়তে হয়। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই আমি মাহবুবের বোন এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমার ভাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদৌস মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া অর্থে ভালই আছে মাহবুবের পরিবার। তবে মাহবুবের কবরটি সংরক্ষণের প্রয়োজন। শহীদ মাহবুবুর রশিদ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ফুলবাড়িয়া গ্রামের গরিব কৃষক পরিবারের ছেলে ছিলো। তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।