হায়রে হাসিনা বেগম?

 

 

মাহামুদ কামরান: নাম হাসিনা বেগম। রাতে চুয়াডাঙ্গায় জেগে চিৎকার করা এক মহিলার নাম। বয়স? দাঁতগুলো ঝরে গেছে। হাড্ডিসার চামাড়ায় দারিদ্র্যের ভাজ নাকি বয়সের দাগ? বোঝা কঠিন। তবে অনেকেরই অনুমান ৬৫ পার।

কখন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরে, কখনো স্টেশনে রাতযাপন আর এলোমেলো চিৎকার করা নারী হাসিনাকে আবারো হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কে বা কারা দিন পনেরো আগে হাসপাতালে রেখে যান। হাসপাতালে শাদা পোশাক পরা সেবিকাদের কাছেও পরিচিত মুখ। কারণ মাঝে মাঝেই তাকে হাসপাতালে রাখা হয়। নিখরচার চিকিৎসা আর বিনামূল্যের ঝোল তরকারিসহ শাদা ভাতে কিছুটা চলার মতো হলেই তিনি হাসপাতাল ছাড়েন। এবারও কি তিনি হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন?

অবস্থা খুবই করুণ। ক’দিন ধরে প্রসূতি ওয়ার্ডের এক কোণায় রাখা হলেও দু দিন রাখা হয়েছে হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে। দুর্বলতা তাকে পেয়ে বসেছে। অসাড় দেহ পড়ে আছে। চিকিৎসা? মাঝে মাঝে। যদি সেবিকাদের মধ্যে কারো দয়া হয় তবেই। হাসপাতালে থাকলেও চিকিৎসাপত্রের হদিস নেই। কেন? কে জানে কখন কীভাবে ভর্তি হয়েছে, আদৌও ভর্তি করে চিকিৎসাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে কি না! হাসিনা বেগম দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার পথে হাজির হন। প্রথমে রেলওয়ে স্টেশনেই থাকতো। ঝাড়ু দেয়ার কাজটা হাসনাই সারতো। ইচ্ছে হলেই হাসিনা তার কুড়োনো কাগজের বস্তা নিয়ে পাড়ি জমাতো শহীদ হাসান চত্বরের কোনো এক বন্ধ দোকানের সামনে। চিৎকার? কি বলে যে তিনি চিৎকার করে উঠতেন তা বহুবার শুনেও কেউ বোধ করি মনেই করতে পারবে না। তবুও রাতের চুয়াডাঙ্গায় চিৎকার করা বৃদ্ধার প্রতি দরদে কারোরই যেন কমতি ছিলো না। যদিও তার খোঁজ রাখার মতো সময় হয়ে ওঠে না কারোর। কোথা থেকে এলেন, কোথায় বা তার গন্তব্য? আপনজনেরা কি সে খোঁজ রাখেন? হয়তো খুঁজেই হয়রান, নয়তো আপদ বিদায়ের স্বস্তিতে শান্তির ঘুমে বেঘোর!