হালনাগাদে ভোটারপ্রতি ব্যয় ১২২ টাকা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার প্রতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১২২ টাকা খরচ নির্ধারণ করেছে। চলতি বছর ৪৬ লাখ নতুন ভোটারকে জাতীয় ভোটার তথ্যভাণ্ডারে অন্তর্ভুক্তের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। যদিও এই বাজেট নিয়ে কমিশনের আপত্তি রয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১২ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হালনাগাদে ভোটার প্রতি ১১৪ টাকা করে খরচ হয়েছিলো।

চলমান ভোটার হালনাগাদে (২০১৪ ও ২০১৫) ইতোমধ্যে দু কিস্তিতে ২৪ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। বাকি অর্থ পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসির বাজেট শাখা। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের পেছনে। অভিযোগ উঠেছে, কাজ শেষ হলেও তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারের দায়িত্বে নিয়োজিত স্কুল ও কলেজ শিক্ষকরা এখনো সম্মানী পাননি। ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রশিক্ষণের নামে কিছু অর্থ অপচয় হয়েছে। পছন্দের কর্মকর্তাদের বারবার প্রশিক্ষক দেখানো হয়েছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) ও ইসির হিসাবে অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছর ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ভোটার হালনাগাদের জন্য মোট বাজেট করা হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে এই বাজেট কম ও বেশি হতে পারে। এ বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম তিনটি ধাপে করা হচ্ছে। ৫১৪টি উপজেলা/থানায় ৪৬ লাখ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তের পরিকল্পনা করে গত মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৮১ উপজেলায় হালনাগাদের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২১৩ উপজেলার তথ্য সংগ্রহ শেষে এখন নিবন্ধন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর তৃতীয় ধাপে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১২০ উপজেলায় হালনাগাদের কাজ শেষে ছবি তোলার কার্যক্রম চলছে। তিন ধাপের মোট ৫১৪ উপজেলার মধ্যে ২৪০ উপজেলায় এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। আর বাকি ২৭৪ উপজেলায় এখনো খরচ দেয়া হয়নি।

প্রতি ভোটারের পেছনে যে ১২২ টাকা খরচ হবে তার মধ্যে তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, টিম লিডার, প্রুফ রিডার, ডাটা এন্ট্রি হেলপার, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট খরচ উল্লেখযোগ্য। তথ্য সংগ্রহকারীদের প্রতি ভোটার এন্ট্রির জন্য ২০ টাকা এবং দুর্গম এলাকার জন্য ৩০ টাকা করে পাচ্ছেন। সুপারভাইজারদের দেয়া হচ্ছে প্রতি ভোটারে যথাক্রমে ৪ টাকা ও দুর্গম এলাকার জন্য ৬ টাকা করে। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পাচ্ছেন ১২ টাকা-দুর্গম এলাকায় ১৮ টাকা। এরপর প্রতি ভোটারের টিম লিডার ৩ টাকা-দুর্গম এলাকায় ৫ টাকা, প্রুফ রিডার ৬ টাকা-দুর্গম এলাকায় ৯ টাকা, ডাটা এন্ট্রি হেলপার ২ টাকা-দুর্গম এলাকায় ৩ টাকা, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ২ টাকা-দুর্গম এলাকায় ৩ টাকা করে পাচ্ছেন। হিসাব অনুযায়ী ইসির ভোটার প্রতি ৪৯ টাকা ও দুর্গম এলাকায় ৭৪ টাকা করে খরচ হচ্ছে। এর বাইরে মাইকিং এর জন্য প্রতি উপজেলায় ১০ দিন ১২ হাজার টাকা, উপজেলায় ব্যানার ৫টির প্রতিটি মূল্য ৮০০ টাকা, উপজেলায় সমন্বয় সভার জন্য ১০ হাজার টাকা, জেলায় সমন্বয় সভার জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণ করা আছে। এছাড়া উপজেলা কর্মকর্তাদের ঢাকায় সমন্বয়ের জন্য জ্বালানিসহ ২০ হাজার টাকা, ফরম বাবদ প্রতিটির জন্য ১০ টাকা, তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার স্টেশনারী কলম, পেন্সিল, খাতা, শার্পনার, রাবার, সিল, নাম ও এনআইডি সিল প্রতিটি ১১০ টাকা হারে খরচ, পরিবহর খরচ প্রতিদিন টিম প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা, দুর্গম এলাকায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা, সার্ভার পরিচালনার জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র প্রস্তুতি ব্যয় ২ হাজার টাকা-দুর্গম এলাকায় ২ হাজার ৫০০ টাকা, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র পরিচালনা ব্যয় দিনে ৫০০ টাকা ও দুর্গম এলাকায় ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের দিতে হয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজারের ওপরে। এছাড়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, প্রুফ? রিডার, টিম লিডার, আনসার-ভিডিপি, টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের দেয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সুষ্ঠু মনিটরিং না থাকায় এবারও অর্থের অপচয় হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা যথাযথ ব্যয় সবখানে দেখানো হয়নি। অনেক স্থানে মাইকিং না করেই অর্থ নেয়া হয়েছে। সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণের নামে নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে অর্থ অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই। তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজাররা অবশ্যই সম্মানী পাবেন। কেউ সম্মানী না পেয়ে থাকলে দ্রুত সম্মানী দেয়া হবে।

২০১২ সালে খরচ হয় ১১৪ টাকা: দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একসাথে তিন বছরের (২০১১, ২০১২ ও ২০১৩) তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২০১২ সালের ১০ মার্চ। ৭০ লাখ নতুন ভোটারের টার্গেট করা হয়। তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে ব্যয় ধরা হয় ৮০ কোটি টাকা। প্রতি ভোটারের পেছনে খরচ হয় ১১৪ টাকা করে। যদিও এই খরচ নিয়ে তত্কালীন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো। তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত শিক্ষকরা সম্মানী পাননি বলে অভিযোগ ওঠে।