হাইড্রোজেন গ্যাসভরা হরেক আকৃতির বেলুন নিয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে শিশুদের পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য : ঘটছে দুর্ঘটনা

খাইরুজ্জামান সেতু/উজ্জ্বল মাসুদ: ডরেমন, ঈগল, অ্যারোপ্লেন, ডলফিন ও হাঙরের আদলে প্লাস্টিকের বেলুনে হাইড্রোজেন ভরে দেদারছে বিক্রি করছেন অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা। স্থানীয়দেরও অনেকেই স্থানীয়ভাবে সিলিন্ডারে হাইড্রোজেন প্রস্তুত করে বেলুনে ভরছে। গ্যাস যতোটা না ক্ষতিকর, তার চয়ে অধিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা উড়োতে গিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা। গতকালই চুয়াডাঙ্গায় ওই বেলুন উড়োতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দু শিশুকেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এই বেলুন নিয়ে খেলতে, উড়াতে শিশুদের দৃষ্টি কাড়তেই মূলত হরেক রকম আদলে তৈরি করা হয়েছে বেলুন। এ বেলুন উড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে শুধু শিশুরা আহতই হচ্ছে না, বেলুনের হাইড্রোজেন গ্যাসে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার এক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে তার নিকটজনেরা জানিয়ে বলেছেন, দেদারছে ক্ষতিকর গ্যাস ভরে শিশুদের আকৃষ্ট করে চড়াদামে বিক্রি করা হলেও প্রতিকারের উদ্যোগ নেই। এ বেলুন ও গ্যাস দুটিই পরিবেশ দুষণ বাড়াচ্ছে।

পচনশীল রবারের নয়, প্লাস্টিকের বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে শিশুদের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। চুয়াডাঙ্গা শহরে ব্যাপকতা পেয়ে সম্প্রতি বহিরাগত কয়েক ভ্রাম্যমানণ ব্যবসায়ী প্রথমে বিক্রি শুরু করলেও পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেই বেলুন বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। প্রথমদিকে একটি বেলুন ৮০ টাকায় বিক্রি করা হলেও পরবর্তীতে বিক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধির  সাথে সাথে দরপতন শুরু হয়। গত দুদিন ধরে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিটি বেলুন। বেলুন আকাশে উড়িয়ে দেয়া শুধু অর্থের অপচয়ই নয়, পরিবেশ দুষণ করছে ভয়াবহ আকারে। তাছাড়া যে সিলিন্ডারে গ্যাস প্রস্তুত করার কথা তেমন পরীক্ষিত সিলিন্ডারে গ্যাস প্রস্তুত করা হচ্ছে না। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। আর ডরেমন, ঈগল, ডলফিনসহ নানা আকৃতির বেলুন বিক্রেতারা শুধু শিশুদের আকৃষ্টই করছে না, শিশুরা এসব নিয়ে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম গ্যাস ভূ-পরিমণ্ডলের চেয়ে হালকা। ফলে তা ওপরে ওঠে। এটাই শিশুদের মূল আকর্ষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা নিয়ে খেলতে গিয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা শান্তিপাড়ার বাদশার ছেলে নীরব (৫) উঁচুস্থান থেকে আছড়ে পড়ে আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপরদিকে মহিলা কলেজপাড়ার  কামরুল ইসলামের ৪ বছর বয়সী ছেলে স্বপ্নীল একই ধরনের বেলুন ওড়াতে গিয়ে খাট থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তাকেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।

হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুত প্রণালী: এবার প্লাস্টিকের বোতলে ২০/৩০ মিলি পানি নিয়ে সিগারেটের  ৩/৪ টি রাংতা কাগজ টুকরো করে বোতলের পানিতে রাখতে হবে। বোতলের ভেতর সামান্য চুনগোলা এবং এর সমপরিমাণ বা তার একটু বেশি সোডার মিশ্রণ ঘটাতে হবে। এরপরই দেখা যাবে বোতল থেকে বের হচ্ছে গ্যাস। মূলতঃ এ প্রণালী অনুসরণ করেই বড় আকারে গ্যাস প্রস্তুত করা হচ্ছে সিলিন্ডারে। ভরা হচ্ছে প্লাস্টিকের বেলুনে।