হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল শনিবার সকাল থেকেই শত শত মানুষের ঢল নামে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের সেই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। কারো হাতে ছিল ফুল, আবার কেউ খালি হাতেই শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। কেউবা শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরেছিলেন। মাত্র এক বছর আগে এই হলি আর্টিজানে ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বীভত্স জঙ্গি হামলার ঘটনা। ওই ঘটনার পর হলি আর্টিজান এতদিন বন্ধ ছিল। গতকাল নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খুলে দেয়া হয় হলি আর্টিজান এলাকার প্রবেশ দরজা। তবে দোতলা ওই ভবনের দরজা উন্মুক্ত করা হয়নি। ভবনের পাশেই বারান্দার ওপর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অস্থায়ী বেদি তৈরি করা হয়। সেখানে ফুল দিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আগতরা। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অনেকেই ফুঁপিয়ে কেঁদেছেন। সকালে ফুল দিতে এসেছেন জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালিয়ান নাগরিক নাদিয়া বেনেদেত্তি’র ননদ সামিনা রাখানু। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার পরিবারের জন্য খুব বেদনাবিধুর। অনেক কষ্ট জমা নিয়ে হলি আর্টিজানে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। নাদিয়াকে আমরা খুব মিস করি। তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেছি।’ একপর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন ও ৭ জন জাপানি নাগরিক নিহত হন। ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা’র নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধ দল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে’র নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি জাইকা’র একটি প্রতিনিধি দলও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নিহত ইশরাত আখন্দের পরিবারের সদস্যরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইশরাত আখন্দের মামা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া রুখতে হবে। সরকারও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জঙ্গিবাদ রুখতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। হলি আর্টিজানের ডিশ ক্লিনার নিহত জাকির হোসেন শাওনের পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানায়। শাওনকে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন শাওনের মা মাসুদা বেগম।

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজি মোঃ মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হলি আর্টিজানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মোখলেসুর রহমান বলেন, ওই দিন পুলিশ জীবনবাজি রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। জঙ্গিবাদের মূল উত্পাটন করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এ সময় ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। হামলায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামের স্মরণে বিসিএস ৩০তম পুলিশ ব্যাচের পক্ষ থেকে ডিবির সহকারী কমিশনার মিথুন, সহকারী কমিশনার তৌফিক উদ্দিন, গুলশানের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) জুনায়েদ ও সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে নাড়া দিয়েছিলI। এই হামলার ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিল এবং পেছন থেকে কারা মদদ দিয়েছে তা এখন পর্যন্ত উদঘাটন হয়নি। এ সময় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবদলের নেতা আশরাফুল আলম এবং খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।