হরিণাকুণ্ডুর ভাতুড়িয়া গ্রামে শিমচাষে লাভবান কৃষকরা

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নবগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত ভাতুড়িয়া গ্রাম। সাতটি পাড়া মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস এ গ্রামে। আগে ৮০ ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিলো। এখন দিনে দিনে হিন্দু বসতি কমে প্রায় ৯৫ ভাগ মুসলিম বসতি গড়ে উঠেছে। নদীর অপর দিকে ঝিনাইদহ সদরের সাগান্না ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র বৈডাঙ্গা বাজারের অবস্থান। প্রাচীনকাল থেকেই এ দু ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। হিন্দু বসতির সময় থেকেই হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় শীতকালীন সবজিচাষের জন্য এ এলাকা বিখ্যাত ছিলো। এখন অন্যান্য সবজির সাথে শিম এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। অনেকে ভাতুড়িয়াকে বলে শিমনগরী আবার অনেকে বলে শিমের গ্রাম। গ্রামটি দেখলেই কবি জসিম উদ্দীনের সেই নিমন্ত্রণ কবিতার কথা মনে পড়ে যায় ‘তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়। তুমি যদি যাও দেখিবে সেখানে মটর লতারসনে শিম আর শিম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেইখানে’ এ গ্রামে এমন কোনো কৃষক নেই যার দু-এক শতক জমিতে শিম নেই। তাছাড়া বড় বড় চাষিদের রয়েছে দু এক একর শিমের চাষ।

কয়েক জন শিমচাষির সাথে আলাপকালে তারা জানান, এবার অগ্রিম শিমচাষ করে তারা লাভবান। গ্রামের একজন সফল শিমচাষি মো. বকুল হোসেন বলেন, এবার তার ২০ শতক শিমের আবাদ ছিলো। সেখান থেকে সে সকল খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। এভাবে আরও যাদের সাথে কথা হলো তারাও এমনটিই জানালেন। ভাতুড়িয়া গ্রামে সকাল ১০টা থেকেই মোড়ে মোড়ে বসে শিমের হাট আর তা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে গ্রামের ব্রিজের পাশে কাসেম বাজারে বসে সবচেয়ে বড় শিমের হাট। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বৈডাঙ্গা গ্রামের পাটবক মোড় ও তেঁতুলতলা মোড়েও বসে বড় শিমের হাট। এসব বাজারে শিমের ভরা মরসুমে প্রায় ৭০/৮০ মেট্টিক টন শিম প্রতিদিন ট্রাকযোগে ঢাকার কারওয়ান বাজার, খুলনা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাট উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাজারের ব্যবসায়ী মো. শফি উদ্দীন জানান, এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মেট্টিক টন শিম আমদানি হয়। দূর-দূরান্ত থেকেও চাষিরা এখানে শিম নিয়ে আসেন। শিমচাষিরা বলেন, এখানে চাষিরা শিমের ন্যায্যমূল্য পান। কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, এখানে প্রতি বছরই সাংবাদিকরা আসেন পত্রিকায় খবর প্রকাশ করেন। কিন্তু রাস্তা-ঘাটের কোনো উন্নতি হয় না। এমন কথা বৈডাঙ্গা পাটবক মোড়ের ব্যবসায়ীদের মুখ থেকেও জানা যায় যে, প্রতিদিন প্রায় ২০ মেট্টিক টন শিম কেনা হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটির খুব দূর অবস্থা এর সংস্কার প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের দাবি বৈডাঙ্গা বাজার থেকে কাসেম বাজার শিমের হাট পর্যন্ত পাকা রাস্তটির প্রতি বছর সংস্কারকরণ করা হোক। এছাড়া মোড়ে মোড়ে প্রায় ২০ মেট্টিক টন শিম কেনেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হযরত আলী জানান, শিমচাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যেকোনো সমস্যায় তাদের পাশে থাকা হবে।