স্বামীর পরকীয়ার আগুনে পোড়া অন্তরার মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গা বলদিয়ার মেয়ে বোয়ালিয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার

 

স্টাফ রিপোর্টার: পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামীর দেয়া আগুনে ঝলসে যাওয়া লিমা আক্তার অন্তরা অবশেষে মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করা হতে পারে। অপরদিকে লিমা আক্তার অন্তরার স্বামী চুয়াডাঙ্গা বেলা সদরের বোয়ালিয়া বটতলাপাড়ার নাজমুল মল্লিক রয়েছে জেলহাজতে। গত ১৩ মার্চ সে তার বাড়িতে স্ত্রী লিমা আক্তার অন্তরার শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা আটকে সটকে পড়ে। ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় হিজলগাড়ি ফাঁড়ি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের বোলদিয়া মাদরাসাপাড়ার আলম আলীর মেয়ে লিমা আক্তার অন্তরা হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। অনুমানিক ৬ বছর আগে হঠাত করে দেখতে গিয়ে বিয়ে করে নেহালপুরের অদূরবর্তী বোয়ালিয়া বটতলার নাজমুল মল্লিক। সে সনোয়ার হোসেন মল্লিকের ছেলে। বিয়ের আড়ই কয়েক বছরের মাথায় সংসারে আসে পুত্র সন্তান। ছেলে আবিরের বয়স বর্তমানে আড়াই বছর। গত ১৩ মার্চ সকালে স্বামীর বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হন এক সন্তানের জননী লিমা আক্তার অন্তরা। তাকে উদ্ধার করে শ্বশুরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় লিমা আক্তার অন্তরায় অগ্নিদগ্ধ হওয়ার রোমর্হষক বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তার শরীরে তারই স্বামী আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা আটকে পালিয়ে যায়। কেন? এ প্রশ্নের জবাবে লিমা আক্তার অন্তরা বলেন, হঠাত করে বিয়ে হয় আমাদের। বিয়ের পর শুনি স্বামী নাজমুল মল্লিকের সাথে ওর এক মামির অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য বিয়ের পর সেই সম্পর্ক তেমন বোঝায় যায়নি। ছেলে হলো। একের পর এক দাবির প্রেক্ষিতে যৌতুকও দেয়া হলো। প্রথমে ডিশ লাইনের ব্যবসা করলেও পরে অটো কিনে দেয়া হয়। অটো চালিয়ে ভালোই চলছিলো। হঠাত করে আবার সেই মামির সাথে আবার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রতিবাদ করলে নির্যাতন করতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়েছে।

আগুন ধরিয়ে দিয়ে স্বামী নাজমুল মল্লিক আত্মগোপন করে। লিমা আক্তার অন্তরাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতার থেকে ১৪ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানে টানা ১৫দিন চিকিৎসাধীন রাখার পরও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ফিরিয়ে নেয়া হয়। কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গতরাত ১০টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। অপরদিকে গত ১৯ মার্চ লিমা আক্তার অন্তরার ভাই হাসান বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৬ মার্চ রাতে হিজলগাড়ি পুলিশ ফাঁজড়ির ইনচার্জ এসআই শফি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গ্রেফতার করেন আসামি নাজমুল মল্লিককে। সে বর্তমানে জেলহাজতেই রয়েছে।