সৌদি আরবে অমানসিক নির্যাতনের শিকার ছালমা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় আল জাহান ইন্টারন্যাশনাল নামক ট্রাভেল কোম্পানির কর্মচারী গ্রেফতার

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সৌদি আরবে অমানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়া ছালমা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় আল জাহান ইন্টারন্যাশনাল নামক ট্রাভেল কোম্পানির কর্মচারী আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করেছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। আলমডাঙ্গা থানার এসআই অচিন্ত্য সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঢাকায় অবস্থান করে গত সোমবার তাকে গ্রেফতার করে। ছালমা খাতুনকে প্রায় ১০ মাস পূর্বে পাঁচকমলাপুরের আদম দালাল হাবলু ও ট্রাভেল কোম্পানির কর্মচারী আব্দুল হাই ভাল বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের জিনারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ছালমা খাতুন দরিদ্র দম্পতি। পার্শ্ববর্তী পাঁচকমলাপুরের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে হাবলু ওই দম্পতিকে বিদেশে গিয়ে চাকরি নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর স্বপ্ন দেখান। স্বামী- স্ত্রী দুজনকেই সৌদি আরবে গৃহপরিচারিকার চাকরিসহ পাঠানোর কথা বলে প্রায় ১ বছর আগে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন হাবলু। এক মাস পর ছালমার ভিসা এসেছে, জিনারুলের ভিসা পরে আসবে বলে হাবলু জানান এবং ছালমাকে সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ছালমা তার স্বামীকে ছাড়াই সৌদি আরবে পৌঁছে দালালচক্রেরই সহযোগিতায় সেখানে এক বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। শুরু করেন কাজ। এসব তথ্য জানিয়ে ছালমা খাতুন বলেছেন, মাস খানেকের মাথায় যখন বেতনের কথা বলি, তখন ওই পরিবারের লোকজন আমার ওপর অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। বলে কিসের বেতন? তোমাকে তো ২ বছরের জন্য ৬ লাখ টাকা দিয়ে বাংলাদেশি দালালের নিকট থেকে কিনে নিয়েছি। এ কথা শুনে কাজ করতে অর্স্বীকৃতি জানাতেই শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। দিনের পর দিন আটকে নির্যাতন করে পরিবারের যাবতীয় কাজ দিন রাত করিয়ে নিতে থাকে। ২ মাসের মাথায় একই ভবনের পৃথক ফ্লাটে থাকা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের এক নারীর সাথে পরিচয় হয় ছালমা খাতুনের। তিনি ছালমার হালদশা দেখে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানোর পর ২৫ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে আবার ওই বাড়িতেই তুলে দিয়ে আসে। আবারও শুরু হয় নির্যাতন। সারা শরীরে আঘাতের পর আঘাত করে ওরা। মুখ বুঝেই সহ্য করতে হতো ওদের নির্যাতন। কান্নারও উপায় ছিলো না। মারের পর মার। সারা শরীর সিগারেটের আগুনে দগ্ধ। কয়েক মাসের মাথায় ওই পৃথক ফ্লাটের সেই চট্টগ্রামের নারী আবারও তাকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। হাসপাতালে এবার সাংবাদিকরা হাজির হলে তাদের কাছে কষ্টের কথা খুলে বলেন ছালমা। সব কিছু শুনে বুঝে সাংবাদিকসহ হাসপাতালের কিছু লোকের দয়ায় ২ হাজার টাকা তুলে তাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠায়। সেখান থেকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। গত ২৩ আগস্ট বুধবার যখন বিমানযোগে ফিরছিলেন, তখন তাকে দেখে বিমানের অন্যযাত্রীরা ঘটনা জানতে চান। সব কিছু খুলে বললে তারা সকলে মিলে ২০ হাজার টাকা তুলে ছালমা খাতুনের হাতে দেন। সেই টাকা নিয়ে বুধবার বিকেলে দেশের মাটিতে নামেন। পরদিন বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন। এরপর সেই হাবলু দালাল মোবাইলফোনে ছালমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে মামলা না করার জন্য হুমকি দিতে শুরু করেন। পরে বলেন, তোমাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে, ঢাকায় এসো। ২৫ আগস্ট ছালমা খাতুন শরীরের হাত ও পায়ের অসংখ্য ছ্যাঁকা দেয়া ক্ষত নিয়ে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন হাসপাতালে ছালমা খাতুনের শয্যাপাশে হাজির হন। তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছালমা খাতুন। ছালমা বলেন, ওই দালালের শাস্তি না হলে তিনি মরেও শান্তি পাবেন না। ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনার বর্ণনা শুনে হাবলু দালালসহ তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সাথে তিনি চিকিৎসারও খোঁজখবর নেন।
এদিকে, আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য পাশে দাঁড়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চা। ২৫ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নির্যাতিতা ছালমা খাতুনকে দেখতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যান। সে সময় তারা নির্যাতিতার প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় ছালমা খাতুনের স্বামী বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেন।