সুরক্ষিত রেলক্রসিং অরক্ষিত : ঝরলো ১১ জনের প্রাণ

 

চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে মোট রেলক্রসিং রয়েছে ১১২৮টি। এর মধ্যে অর্ধেকই অবৈধ। গেটম্যান নেই ২১৬০টিতে। এ পরিসংখ্যানই স্পষ্ট, দেশের রেলক্রসিংগুলো কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ। ১ আগস্ট ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বারোবাজারের রেলক্রসিঙেট্রেনের সাথে বরযাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৬ জন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দুর্ঘটনার জন্য রেলওয়েরই কয়েকজন দায়ী। ফলে হতাহত পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে রেলওয়ে বিভাগের এগিয়ে আসা উচিত।

সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী ট্রেনটিকালীগঞ্জের বারোবাজার রেলক্রসিং পার হচ্ছিলো। এ সময় বরযাত্রীবাহী বাসটিরেলক্রসিঙে উঠে গেলে ঘটে সংঘর্ষ। ধাক্কায় বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। যে রেলক্রসিঙে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা রেলওয়ের সুরক্ষিত হলেও কর্তব্য অবহেলার কারণেই অরক্ষিত ছিলো। এ কারণেবারোবাজাররেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও গেটম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একাধিক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবাদপত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সাত বছরে রেলক্রসিঙের দুর্ঘটনায় ২০১ ব্যক্তি নিহত ও ৩৫৯জন আহত হয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেল কর্তৃপক্ষ ও সরকার যথারীতি তদন্তকমিটি গঠন করেছে। তদন্তও হয়েছে। পেশ করা হয়েছে বোধকরি প্রতিবেদনও। রেলক্রসিঙে দুর্ঘটনা বন্ধ হয়নি। কালীগঞ্জের বারোবাজারে রেলক্রসিঙে দুর্ঘটনার দিনই ঢাকার মালিবাগ রেলক্রসিঙে একটি প্রাইভেটকার চুর্ণবিচূর্ণ হয়।

পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশের ৭০ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত এবং এগুলোর ৪০ শতাংশই অবৈধ।রেল কর্তৃপক্ষ এসব খবর যে আমলে নেয়নি, একের পর এক সংঘটিত দুর্ঘটনা তারইপ্রমাণ। সুরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোও নিরাপদ নয়, তা না হলে বারোবাজারের রেলক্রসিঙে গেটম্যান নিযুক্ত থাকার কথা থাকলেও থাকলো না কেন? কেন ঘটলো ভয়াবহ দুর্ঘটনা? চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি রেলগেটেও মাঝে মাঝেই অল্পের জন্য বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়ার খবর মেলে। খাতা কলমে একজনকে নিযুক্ত করা হয় বলে জানানো হলেও নিয়মিত থাকে না। কেন থাকে না? দুর্ঘটনা ঘটলে খাতা-কলমে একজনকে মাস্টাররোলে দেখিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পার পাওয়ার চেষ্টা করবেন। তিনি হয়তো নিয়ম অনিয়মের মারপ্যাচে রক্ষাও পাবেন। স্বজনহারানো কান্নাও একদিন থামবে। বন্ধ হবে কি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি?

দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি গঠন হয়, অতীতে তদন্ত কমিটিগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো কিপরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাস্তবায়নযোগ্য হয়নি?নাকি আদৌ সেগুলোপরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলোর বাস্তবায়নহচ্ছে না কেন?মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত যেখানে, সেখানে কি এতোটা উদাসীনথাকা চলে?রেল প্রশাসনের নিম্নস্তরের দু-একজনকে মাঝে-মধ্যে সাপপেন্ড অথবাবরখাস্ত করা হলেও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিশেষত রেলক্রসিং বিভাগেরউচ্চপর্যায়ে কোনো রদবদল হয়নি। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের আপদমস্তক দুনীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারই কুফল হিসেবে হারিয়েছে জৌলুস, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। ঝরছে প্রাণ। সে কারণেই দরকার রেল প্রশাসনের দ্রুত সংস্কারসহ দুর্নীতিমুক্ত রেলওয়ে।

দোষীব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি ও তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ কার্যকর করার বিষয়দুটিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে দায়ী ব্যক্তিদের রক্ষার অপচেষ্টা অনিয়মকে উসকে দেবে। রেলক্রসিঙে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য যে,১১ জনের প্রাণ ঝরেছে তাদের পরিবারে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। কারো কতর্ব্য অবহেলার জন্য দুর্ঘটনা প্রমাণিত হলে শুধু চাকরিচ্যুত নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে না তারও নিশ্চয়তা দিতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়েকেই।