সিলমারা কমেছে সহিংসতা বেড়েছে : সিইসি

 

পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, এবার জোর করে ব্যালটে সিলমারা কমলেও সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, ৭১৭টি ইউপির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পর্যায়ে বেশকিছু জায়গায় হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। বন্ধও করা হয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতি ছিলো। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো উল্লেখযোগ্য। সহিংসতায় কয়েকজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ঠাকরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন পোলিং কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এজন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।

আপনি বলেছিলেন পঞ্চম ধাপে নির্বাচন আরো ভালো হবে, কিন্তু ভালো হলো না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আগে বলেছিলাম, এটা আমাদের আশা। পুলিশ থেকে শুরু করে ৱ্যাব, আনসার, একটা কেন্দ্রে আটটা করে অস্ত্র, ২২ জনের মতো ফোর্স, এতো ঘন পরিবেশে সবকিছু আমরা করেছি। সার্বক্ষণিক টেলিফোন করছি। সেন্ট্রাল থেকে মুহূর্তে মুহূর্তে সংবাদ নেয়া হচ্ছে। এখন সহিংসতা যদি ঘটে, মানুষ যদি মনে করেন অন্যের মাথায় বাড়ি মেরে জয়ী হবো, এই মানসিকতা কন্ট্রোল করা দুরূহ।

তিনি বলেন, ইসি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছে। টিভি খবরও মনিটরিং করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের নির্দেশনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে কোথাও আগের রাতে সিলমারার ঘটনা ঘটেনি। যেখানে অনিয়ম হয়েছে সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সহিংসতার কারণে কোথাও কোথাও কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলিও করেছে।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রত্যেক ধাপেই সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। এবারও পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটের পরেও তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও কেউ যাতে পক্ষপাত আচরণ না করে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোথাও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। অনিয়ম করে লাভ হবে না। অনিয়মের প্রতিবেদন পাওয়ার সাথে সাথে কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিইসি বলেন, ৬ হাজার ৮৮৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৩টি কেন্দ্র বন্ধের তথ্য পাওয়া গেছে। রিপোর্ট পেলে আরো বন্ধ করা হবে।

সিইসি বলেন, অনিয়মের কারণে একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আটক করা হয়েছে। ১৪০ জনকে দুই লাখ টাকার বেশি জরিমানা এবং একজনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। সিইসিকে পদত্যাগে বিএনপির আহ্বান বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা রাজনৈতিক দল। তাদের বক্তব্যের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেক পর্যায়ে কোনো অভিযোগ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন। হাইকোর্ট যেতে পারেন। কারো মাথায় লাঠি মারার কোনো দরকার নেই। বিচারের মাধ্যমেই সমস্যার নিষ্পত্তি হবে। জনগণ যার পক্ষে রায় দেবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এ নিয়ে মারামারি করার যুক্তি নেই। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

এ সময় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মো. শাহ নেওয়াজ, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।