সিভিল সার্জনের আসার সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়ার অবৈধভাবে পরিচালিত দুই ক্লিনিকের একটি বন্ধ

: অপর ক্লিনিকের রোগদের স্থানান্তর

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সিভিল সার্জনের আসার সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় অবৈধভাবে পরিচালিত দুই প্রাইভেট ক্লিনিকের মধ্যে নিউ জনসেবা ক্লিনিক বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন মালিক এবং হাটবোয়ালিয়া প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকের রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী দাবি তুলেছে, ডাক্তার-নার্সবিহীন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত এ ক্লিনিক দুটি বন্ধ করে দেয়ার।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বুধবার আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার নিউ জনসেবা ক্লিনিক ও হাটবোয়ালিয়া প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিক পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। এ সংবাদ পেয়ে নিউ জনসেবা ক্লিনিক থেকে সকল রোগীদের বের করে দিয়ে ক্লিনিকের দরজায় তালা লাগিয়ে কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায় এবং হাটবোয়ালিয়া প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকের রোগীদের অন্য বিল্ডিঙে স্থানান্তর করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে সিভিল সার্জনের সাথে উপস্থিত স্টেনো আব্দুল কাদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এলাকার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারাও একই অভিযোগ করে বলেছেন- সিভিল সার্জনের আসার কথা শুনেই একটি ক্লিনিক সাময়িকভাবে বন্ধ করে পালিয়ে যায় মালিক ও অপরটির রোগীদের দ্রুত পৃথক আরেকটি বিল্ডিঙে স্থানান্তর করে নেয়।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়াতে অনুমোদনহীন ২টি প্রাইভেট হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। হাটবোয়ালিয়া প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিক ও অন্যটি নিউ জনসেবা ক্লিনিক। এলাকাবাসীর অভিযোগ – এ দুটি ক্লিনিকের একটিতেও নিয়মানুযায়ী নার্স কিংবা ডাক্তার নেই। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এ দুটি ক্লিনিক মালিক দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শর্ত মোতাবেক প্রতিটি ক্লিনিকে ৬ জন ডিপ্লোমা নার্স ও ৩ জন সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তার উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকতে থাকলেও এ দুটি ক্লিনিকে একটিও ডিপ্লোমা নার্স কিংবা সার্বক্ষণিক ডাক্তার নেই। নিউ জনসেবা ক্লিনিকের মালিক সিরাজুল ইসলাম পূর্বে আলমডাঙ্গার কনা নার্সিং হোমে ওয়ার্ডবয় ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়ার্ডবয়ই এখন ক্লিনিক চালান। মাঝে মধ্যে ডাক পেয়ে এ ক্লিনিকে ছুটে যান বিভিন্ন ডিপ্লোমা ডাক্তার। এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, প্রায় ২ বছর পূর্বে নিউ জনসেবা ক্লিনিক ছিলো এখন যেটা হাটবোয়ালিয়া প্রাইভেট হাসপাতালের স্থলে। সে সময় জনসেবা ক্লিনিকে অপারেশন করতেন জীবননগরের ডাক্তার আলী নামের এক ব্যক্তি। ক্লিনিক মালিক তাকে বিখ্যাত সার্জন পরিচয় দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করতেন। একদিন হঠাত ওই ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলে অপারেশনের টেবিল থেকে তথাকথিত বিখ্যাত সার্জন ডাক্তার আলী ছুটে পালিয়ে যা। পুলিশ তাড়িয়ে ধরে আটক করে থানায় নেয়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো। ক্লিনিকটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। পরে নতুন করে নিউ জনসেবা নামে তারা আবার চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতেছে।

অন্যদিকে গত ২০ জুলাই হাটবোয়ালিয়ার অনুমোদনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় ৭ বছরের শিশু মরিয়মের জীবন সঙ্কটাপন্ন হলে তোপের মুখে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আলমডাঙ্গা উপজেলার বামানগর গ্রামের আব্দুল হামিদের ৭ বছরের শিশুকন্যা মরিয়ম হঠাত অসুস্থ হলে নিয়ে ভর্তি হয় এ ক্লিনিকে। সনোগ্রাম করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় মরিয়মের অ্যাপেন্ডিস অপারেশন প্রয়োজন। গত ১৯ জুলাই হারদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাক্তার বিডি দাস ওই হাসপাতালে গিয়ে মরিয়মের অ্যাপেন্ডিস অপারেশন করেন। পরদিন অর্থাৎ ২০ জুলাই বিকেল থেকে মরিয়মের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সন্ধ্যায় শিশু মরিয়মের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। রাত ৯টার দিকে রোগীর বিক্ষুব্ধ আত্মীয়-স্বজন চড়াও হয় ক্লিনিকে। তারা ঘিরে রাখে অবৈধভাবে পরিচালিত ক্লিনিকটি। সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়া ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতে আলমডাঙ্গা থেকে ডাক্তার গিয়ে সারারাত চিকিৎসা করার পর শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। রোগীর আত্মীয়স্বজন দাবি করেছেন- ওই ক্লিনিকে কর্মরত তথাকথিত নার্স সরোজগঞ্জের আঁখি খাতুন একটি ইনজেকশন দেয়ার পরপরই শিশুটির অবস্থার অবনতি শুরু হয়। রাতে যে চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন, সেই চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটির শরীরে রেনিটিড ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিলো। ওই জাতীয় ইনজেকশন খুব ধীরে ধীরে শরীরে পুশ করতে হয়। কিন্তু না করে দ্রুততার সাথে পুশ করার কারণে ওই বিপত্তি ঘটেছে। স্থানীয় অনেকে অভিযোগ তুলে জানিয়েছে ওই ক্লিনিকটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। আইনমাফিক কোনো ডাক্তার কিংবা নার্স নেই। দরকার থাকলে সুদূর আলমডাঙ্গা থেকে ডাক্তার নিয়ে আসা হয়। নার্স আঁখি খাতুনের নেই পেশাগত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা। চিকিৎসা সেবার মতো গুরুত্ববহ পেশায় নার্সের নামে এখানে যাদেরকে রাখা হয়েছে, তাদের নিয়েও নানাজনে নানা মুখরোচক আলোচনা করে থাকে। এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছে- এভাবে কি ক্লিনিক চলে কিংবা চিকিৎসা সেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্ভব? এখানে যে সকল ডাক্তার অপারেশন করতে যান হামেশা, তাদের নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়েও এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছে। এ সকল মহান ডাক্তাররা অপারেশন পরবর্তীকালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কার ওপর ন্যাস্ত করেন অপারেশন করা রোগীর দায়িত্ব? যেখানে একটিও পাস করা নার্স কিংবা ডাক্তারও নেই।