সাঁড়াশি অভিযানে একদিনেই গ্রেফতার দেড় সহস্রাধিক

 

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ সদর দফতর থেকে ঘোষিত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম দিনে গতকাল শুক্রবার বড় কোনো সাফল্য আসেনি। গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত অভিযানে এক হাজার ৫৭০ অপরাধীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সাধারণত প্রতিদিন সারাদেশে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ জন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়। বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় চারশ’ বেড়েছে। এ অভিযানে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭৭ জনকে। তাদের মধ্যে চিহ্নিত কোনো জঙ্গি নেতা বা সন্ত্রাসী নেই। তবে বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের একটি বাসা থেকে জেএমবির এক সদস্যকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এদিকে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে পাবনায় জঙ্গি কায়দায় সেবাশ্রমের এক সেবক নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো জঙ্গি সংগঠনের নামে এ হত্যার দায় স্বীকার করা হয়নি।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, দেশব্যাপী জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ অভিযান তদারকি করা হচ্ছে।
পূর্ণাঙ্গ তথ্য আজ সকালে জানানো হবে: সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার বেশিরভাগই বিভিন্ন পুরনো মামলার আসামি। তালিকাভুক্ত পুরনো বা পলাতক জঙ্গি সদস্যদের স্বজন, স্থানীয় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও জামায়াত-শিবিরের পলাতক নেতাকর্মীও রয়েছে গ্রেফতারদের তালিকায়। সাঁড়াশি অভিযানের অংশ হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে রাস্তায় তল্লাশি করতেও দেখা গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) শহিদুর রহমান বলেন, সাত দিন ধরে এ অভিযান চলবে। অভিযানে আটক ব্যক্তিদের অপরাধের ধরন ও অপরাধমাত্রা যাচাই করা হচ্ছে। এজন্য এখনই আটক বা গ্রেফতারের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। শনিবার সকালে আগের ২৪ ঘণ্টার অভিযানের ফলাফল জানানো হবে। তবে পুলিশ সদর দফতরের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের প্রথম দিন গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে দেড় হাজারের বেশি আটক করা হয়েছে। তাদের অপরাধের ধরন যাচাই করে নির্দোষদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সাঁড়াশি অভিযানে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৭৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক থেকে গত বৃহস্পতিবার জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক দেশব্যাপী এ অভিযানের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার জোরদার করারও নির্দেশ দেন।
বগুড়ায় জেএমবি আস্তানা থেকে জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার: পুলিশ কর্মকর্তাদের উদৃব্দত করে বগুড়া ব্যুরো জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের একটি বাসায় জেএমবি সদস্যদের গোপন বৈঠকের সময় সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেখান থেকে জেএমবি সদস্য সাগর আহমেদ রনিকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। তল্লাশি চালিয়ে ২১টি জঙ্গিবাদী বই জব্দ করেছে পুলিশ। বগুড়া পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামান বলেন, রনির নেতৃত্বে জেএমবির চার থেকে পাঁচ জঙ্গি বৈঠক করছিল। রনিকে গ্রেফতার করা গেলেও অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেছে। পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, রনির বাড়ি রাজশাহীর দাসমারী এলাকায়। তার ভাই মামুনও জেএমবি জঙ্গি ছিলো। ঝালকাঠির বিচারক হত্যা মামলায় মামুনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাদের পুরো পরিবারই জেএমবির সাথে জড়িত। গত এপ্রিলে বগুড়ার শেরপুরে এক বাড়িতে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান ফারদিনও তাদের আত্মীয়। রনির বোনজামাই জেএমবি জঙ্গি মুজাহিদ ওই ঘটনার পর থেকে পলাতক।