সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার চাই : ভাষাসংগ্রামী শিক্ষক আবু কাইজার

হাসেম রেজা: মহান ভাষা আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গা জেলার যেসব ভাষাসংগ্রামী অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন শিক্ষক আবু কাইজার। কিন্তু প্রচারবিমুখ এই মানুষটির মূল্যায়ন জেলার মানুষ তেমনভাবে দেখাননি। তাতেও তার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি চান সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন করা হোক। চুয়াডাঙ্গা জেলার ভাষাসংগ্রামী শিক্ষক আবু কাইজার অসুস্থ শরীর নিয়েই দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ১৯৪৯ সালে শেষের দিকে মাতৃভূমি ভারত ছেড়ে বাংলাদেশের ঝিনইদহ জেলার অন্তর্ভুক্ত কোর্টচাদপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। ওই সময় চলছিলো বাংলা ভাষার দাবিতে প্রাণান্ত আন্দোলন। এ অঞ্চলের প্রধান সংগঠক হিসেবে এলাকার খ্যাতনামা আওয়ামী মুসলিম লীগের তরুণ নেতাদেরকে একত্রিত করে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করতে আত্মনিয়োগ করেন। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী যখন যা হওয়া উচিত সেই সমস্ত কর্মকান্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে ভাষা সৈনিক আবু কাইজার। তিনি বলেন, ছাত্রকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো সব আন্দোলনের সূতিকাগার। ১৯৫০ সালে আব্দুল মতিন সাহেবকে আহ্বায়ক করে ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী তিনি আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ১৯৫২’র ফেব্রুয়ারি মাসের আগে প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে পল্টন ময়দানে সভায় পূর্ববাংলার ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান করে ঊর্দু রাষ্ট্রভাষা হবে বলে ঘোষণা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা এবং সংগ্রামে কমিটির ডাকে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট, ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সব স্কুল-কলেজে ধর্মঘট এবং ২১ ফেব্রুয়ারি দেশেব্যাপী স্কুল-কলেজে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। শুধু ছাত্র নয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটিও গঠন করা হয়। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এবং গুলিবর্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকতসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। অনেক ঘটনা ঘটে, তা সবার জানা। জেলায় জেলায় ২১’র সংগ্রাম কমিটির নেতা ও সদস্যদের, ধরপাকড় ও হয়রানি করা হয়। এ সময় তিনি আত্মগোপনে থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামে চলে যান। পরে সরকারের সাথে আপস হলে হুলিয়া উঠানো হয় এবং ঊর্দুর সাথে বাংলাও অন্যতম ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে তিনি কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জড়িয়ে যান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জেলা অন্যতম নেতা হেবা ডাক্তারের নেতৃত্বে এলাকার অন্য বন্ধুদের সাথে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ সংগঠক হিসাবে নিজেকে সোপর্দ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পর পর তিনবার কুড়ুলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কোমরপুর গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এই ভাষাসংগ্রামীর জন্ম ১৯২৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর সদর উপজেলার নারায়ণপুরে গ্রামে।