সমর্থন অটুট : মাহমুদ আব্বাসকে হাসিনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে আসা ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা ঢাকার পক্ষ থেকে সমর্থন অটুট থাকার কথা জানান। পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের নিন্দাও জানানো হয় বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের মানচিত্র অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিয়ে আসছে। ঢাকা বরাবরই বলে আসছে, কোনো স্বার্থের ভিত্তিতে নয়, সংবিধানে বলা আদর্শের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশের এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে। গত ডিসেম্বরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবেও বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া নিয়ে উদ্বেগ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার প্রেক্ষাপটে পুরনো মিত্র বাংলাদেশে সফরে এলেন মাহমুদ আব্বাস। বুধবার ঢাকায় আসা ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হয়ে বিকালে যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে মাহমুদ আব্বাসের একান্তে আলোচনার পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়, যাতে দুই দেশের যৌথ কমিশন গঠনে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, প্যালেস্টাইন দেশটি এখন বিশেষ ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে। বিশেষ করে ইসরাইলের আগ্রাসনবাদী পদক্ষেপের ফলে যে টু স্টেট সলিউশনের কথা আমরা অনেক দিন ধরে শুনে আসছিলাম; তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার দুই রাষ্ট্র… প্যালেস্টাইন একটা রাষ্ট্র হবে, ইসরাইল একটা রাষ্ট্র হবে; এই যে বহু আগে গৃহীত যে সিদ্ধান্ত, তার প্রতি পুনরায় আমাদের সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বাংলাদেশের যে ‘চিরন্তন’ সমর্থন আছে, তাও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব। শেখ হাসিনা এর আগেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব?্য রেখেছেন। কয়েক বছর আগে গাজায় ইসরাইলি অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের নেতা ইয়াসির আরাফাতের গভীর বন্ধুত্বের কথাও মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে স্মরণ করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ইয়াসির আরাফাতের যে সমর্থন, তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু ও ইয়াসির আরাফাতের যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল, সে বিষয়টিও তিনি বৈঠকে তুলে ধরেছেন। ইসরাইলকে এখনো স্বীকৃতি না দেয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন বলে শহীদুল হক জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্যালেস্টাইন কিন্তু ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান করেছে। বাংলাদেশ স্বীকৃতি দান করেনি। বাংলাদেশ তখনই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে, যখন দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের বহুদিন ধরে বাংলাদেশে বৃত্তি দেয়ায় বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ের এই বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ?পূর্ণ ছিল বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। সমঝোতা স্মারকটির বিষয়ে তিনি বলেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর দুই দেশের ফরেন অফিসের মধ্যে নিয়মিত কনসালটেশন হবে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। মাহমুদ আব্বাসের এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে ঢাকা। ‘এই সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের প্যালেস্টাইন জাতিসত্তার প্রতি যে চিরন্তন সমর্থন; সেটা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে,’ বলেন পররাষ্ট্র সচিব। এ সময় সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দুই নেতার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাণিজ?্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, উপদেষ্টা গওহর রিজভী, বিদদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে মাহমুদ আব্বাসের শ্রদ্ধা: ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ধানমণ্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জানান তিনি।
সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঢাকা থেকে সড়ক পথে দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং গৃহায়ন ও গর্ণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান। মাহমুদ আব্বাস ফুল দিয়ে স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি পরিদর্শন বইতে সই করেন এবং একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন।
পরে দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করেন বলে উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর জানান। সাভার থেকে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে ধানমণ্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পৌঁছান ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট। সেখানে তাকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টকে জাদুঘরের বিভিন্ন অংশ ঘুরিয়ে দেখান। তিন দিনের সফরে বুধবার ঢাকা আসেন মাহমুদ আব্বাস।