সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বঙ্গবাহাদুরের মৃত্যু

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের আসাম থেকে বানের জলে ভেসে আসা বুনো হাতিটির নাম দেয়া হয়েছিলো বঙ্গবাহাদুর। হয়তো লোকালয়েই থাকতে চেয়েছিলো হাতিটি। কিন্তু এলাকাবাসীর ক্ষতির কথা চিন্তা করে হাতিটিকে উদ্ধার করার সব প্রস্তুতি নেন সংশ্লিষ্টরা। লোকালয় থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টায় মারা যায় বঙ্গবাহাদুর।

এদিকে উদ্ধারকারী দলের অবহেলায় হাতিটির মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তাদের শাস্তির জন্য বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় একটি পরিত্যক্ত কূপে পড়ে আটকে পড়া একটি হাতির শাবককে যৌথভাবে উদ্ধার করেছে স্থানীয় বন্যহাতি সুরক্ষা দল ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’, বন-বিভাগ, দমকল বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। গতকাল সকালে ওই শাবকটিকে উদ্ধার করা হয়।

বঙ্গবাহাদুর সম্পর্কে বন বিভাগের কর্মকর্তা তপন কুমার দে জানান, হাতিটি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। অনেকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর কারণে পুষ্টিজনিত দুর্বলতায় ভুগছিলো হাতিটি। যদিও স্যালাইন দিয়ে হাতিটি সুস্থ করার চেষ্টা করছিলেন বন কর্মকর্তারা। গত সোমবার তাপমাত্রা বেশি থাকায় ‘বঙ্গবাহাদুর’ অসুস্থ হয়ে কাদাপানিতে পড়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতিটির শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ১২টি স্যালাইন দেয়া হয়। তবে হঠাত করে অনেক গরম পড়ার কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ বুনো হাতিটির মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করছেন এ বন কর্মকর্তা। হাতিটিকে সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের চিকিৎসা ও সেবা দেয়া হয়েছিলো বলে দাবি করেন তিনি। হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন উদ্ধারকারী দলের সদস্য বন বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. বিদুৎ কুমার সাহা। ১ মাসের বেশি সময় ধরে পিছু পিছু ঘোরার পর গত ১১ আগস্ট ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে অচেতন করে ডাঙ্গায় তোলা হয় হাতিটিকে। পায়ে শিকল ও রশি দিয়ে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে শুরু হয় সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া। পরিকল্পনা ছিলো, সাফারি পার্কে ছেড়ে দেয়া হবে তাকে। কিন্তু কীভাবে তা করা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব প্রক্রিয়া শেষ না হতেই গত সোমবার মধ্য রাত থেকেই ঝিমিয়ে পড়ে বঙ্গবাহাদুর। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় সরিষাবাড়ী উপজেলার কয়রা গ্রামের বাইদ্যা বিলে বঙ্গবাহাদুর মারা যায় বলে জানান উদ্ধারকারী দলের সদস্য ঢাকার বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক।

উদ্ধারকারী দলের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেড়মাসের অধিক সময় ধরে বুনোহাতিটি দেশের ৫টি জেলার নদীনালা খাল বিলসহ প্রায় ১৮শ’ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া ৫-৬ বার ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে মেটাল ডার্টে অচেতন করার ওষুধ প্রয়োগ করে উদ্ধার এবং লোহার শিকল ও মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখায় সে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। গত সোমবার দ্বিতীয় দফা শিকল ছিঁড়ে ছুটে যাওয়ার পর ৪টি ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে ডার্ট ইনজেকশন দিলে অসুস্থ হয়ে হাতিটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বঙ্গবাদুরের মৃত্যুতে এলাকাবাসী যেন তাদের অতি আপনজনকে হারালেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কয়ড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মুকুল মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাঁদিয়ে সে চলে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না।’ এদিকে হাতি উদ্ধারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উদ্ধারকর্মীদের গাফিলতির কারণেই হাতিটা মারা গেছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। এমনকি কয়ড়া গ্রামের সোলায়মান, মোস্তাক, আবদুর রশীদের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক লোক উদ্ধারকারী দলের অবহেলার কারণে বঙ্গবাহাদুরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তাদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে। অন্যদিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে একটি পরিত্যক্ত কূপে পড়ে গিয়ে আটকে পড়া একটি হাতির শাবককে যৌথভাবে উদ্ধার করা হয়েছে।

ঝিনাইগাতীর বন বিভাগের তাওয়াকুচা বিট কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম জানান, গত ১৫ আগস্ট রাতে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামে ৪০-৪৫টির মতো একটি বন্যহাতির দল খাদ্যের সন্ধ্যানে লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় হাতির দলের সঙ্গে থাকা একটি শাবক পরিত্যক্ত প্রায় ২২ ফুট গভীর একটি মাটির কূপে পড়ে যায়। হাতির দল ওই শাবকটিকে উদ্ধারের জন্য ভোর ৬টা পর্যন্ত চেষ্টা চালায়। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়লে হাতির দল বাচ্চাটিকে ফেলে রেখে গভীর অরণ্যে চলে যায়। পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বন্যহাতি সুরক্ষা দল ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ বন-বিভাগ, দমকল বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যরা এলাবাসীর সহযোগিতায় কূপ থেকে রাস্তা তৈরি করে হাতির উঠার পথ তৈরি করে দেন। পরে দমকল বাহিনীর সদস্যরা হাতিটিকে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় উঠিয়ে দেন। এ সময় হাতিটি ছাড়া পেয়ে দৌড়ে গভীর অরণ্যে চলে যায়।