সকলকে শোকসাগরে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বর্ষীয়ান নেতা মীর্জা সুলতান রাজা

জীবননগর, দর্শনা ও চুয়াডাঙ্গায় নামাজে জানাজায় উপচেপড়া মানুষ : গার্ড অব অনার প্রদানসহ ফুল দিয়ে জানানো হলো বিনম্র শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার: সকলকে শোকসাগরে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বর্ষীয়ান নেতা মীর্জা সুলতান রাজা। চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মঠে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার শেষে ৪র্থ দফা নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে বেলা ১২ টায় দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। পিতা-মাতা ও এক ছেলের কবরের পাশেই রাজাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

ফুল, ফুলের মালা দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের পর চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণে নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ নেয়া হয় জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে। দাফনেও শরিক হন অসংখ্য মানুষ। জানাজাপূর্ব বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, মীর্জা সুলতান রাজার সহোদর বীরমুক্তিযোদ্ধা মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু প্রমুখ। সকলেই মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন এবং রাজার কীর্তিময় জীবনের সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন। সহোদর বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। মীর্জা সুলতান রাজা মহান মুক্তিযুদ্ধেই শুধু আত্মনিয়োগ করেননি, তিনি জাতীয় রাজনীতিতে যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনই তিনি তার চুয়াডাঙ্গাবাসীর সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন।

‌                চুয়াডাঙ্গা শেখপাড়ার মীর্জা মঞ্জিলের মরহুম ময়েজ উদ্দীনের বড় ছেলে মীর্জা সুলতান রাজা গত পরশু রোববার বেলা ২টার দিকে ঢাকা খিলগাঁওস্থ বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে মীর্জা সুলতান রাজার বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর। মৃত্যুর খবরে ঢাকার জাতীয় নেতাদের অনেকেই খিলগাঁওস্থ বাসায় ছুটে যান। শেষবারের মতো দেখেন। শ্রদ্ধাজানান। বাদ মাগরিব প্রথম দফা নামাজে জানাজা শেষে রাতে মরদেহ চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে নেয়া হয়। সকাল ৯ টায় জীবননগর কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে নেয়া হয় দর্শনা কেরুজ মাঠে। কেরুজ মাঠে উপচেপড়া জনতা মরহুমকে দেখতে ভিড় জময়। সেখানে তৃতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে মরহদেহ পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১১টার দিকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের টাউন ফুটবল মাঠে।

Mirz Sultan Raja

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাসদের সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধ দক্ষিণ পশ্চিম রাণাঙ্গনের অন্যতম সংগঠক মীর্জা সুলতান রাজার মৃতদেহ টাউন ফুটবল মাঠে নেয়া হলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন, পুলিশের তরফে পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খোস্তার জামিল, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, সাধারণ সম্পাদক মাফজুর রহমান মঞ্জুসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ মুক্তযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কমান্ডের পক্ষে ইউনিট কমান্ডার নূরুল ইসলাম মালিকসহ উপস্থিত বীরমুক্তিযোদ্ধগণ, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পক্ষে মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আইনজীবী পরিষদের পক্ষে অ্যাড. মো. নূরুল ইসলাম, উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার পক্ষে জহির রায়হান, জেলা যুবলীগের পক্ষে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আরেফিন আলম রঞ্জুসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের চৌকস পুলিশ দল বিউগল বাজিয়ে সশস্ত্র ছালাম জানায়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ নেতৃবৃন্দ ছালামও ছালাম জানান। এরপর নামাজে জানাজা সম্পন্ন করা হয়। নামাজে জানাজায় চুয়াডাঙ্গার সর্বস্তরের জনতা, আত্মীয় স্বজন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মুসল্লি শরিক হন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, মীর্জা সুলতান রাজার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় জীবননগর কেন্দ্রীয় ঈদগাঁহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাজায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদ, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ, রাজনীতিক কাজী বদরুদ্দোজা, উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, প্রবীণ শিক্ষক মুন্সী আব্দুস সাত্তার, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ অমল, পৌর বিএনপি সভাপতি শাহজাহান কবীর, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রভাষক আমির খলিলুর রহমান, উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, দৌলৎগঞ্জ সিঅ্যান্ডএফ ও আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন, দৌলৎগঞ্জবাজার কমিটির আহ্বায়ক এম আর বাবু এবং মরহুমের সহোদর মির্জা শাহরিয়ার লন্টু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ, সুধী, সাংবাদিক ও সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ মানুষটিকে একনজর দেখতে ও তার জানাজায় মানুষের ঢল নামে। এসময় অনেকে অশ্রু বিসর্জন করেন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে দর্শনা কেরুজ বাজার মাঠে সমবেত হতে থাকে শোকার্ত মানুষ। ১০টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় জানাজার নামাজ। এতে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, যুগ্মসম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দর্শনা পৌর মেয়র মহিদুল ইসলাম, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান, কমিউনিস্ট পার্টি নেতা অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা সৈয়দ মজনুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, রহমতুল্লাহ, দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে,  রাজার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ শামসুল আবেদীন খোকন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও আলমডাঙ্গা উপজেলা, পৌর এবং কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষে লিখিত শোক জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালমুন আহমেদ ডন, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার ও কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুল হক। উল্লেখ্য, মীর্জা সুলতান রাজার আদি বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার ছয়ঘরিয়ায়। তিনি মরহুম মীর্জা ময়েজ উদ্দীন আহম্মেদের বড় ছেলে। তিনি ১৯৩৭ সলের ৪ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার গোয়ালহুদা গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মীর্জা সুতান রাজার তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে মারা গেছেন। দু ছেলে ঢাকায় ব্যবসা করেন। তিন কন্যা বিবাহিত। স্ত্রী সন্তানসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন।