সংসারের দৈন্যতায় বাড়িছাড়া দু স্কুলছাত্রী অবশেষে ৫ দিন পর ফিরেছে বাড়ি 

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: বাস্তবতা বড় কঠিন। আবেগ আপ্লুত হয়ে মানুষের জীবনে ঘটে যায় বহু ঘটনা। বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে কেউ হেরে যায় আবার কেউ হাজারো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নিজেকে দাড় করায়। এমনভাবে আবেগি হয়ে ঘর ছেড়ে ছিলো চুয়াডাঙ্গা সদরের গোবরগাড়া গ্রামের দু স্কুলছাত্রী সোহাগী ও শারমিন। পুলিশি তৎতপরতায় ঘটনার ৫ দিনের মাথায় বাড়ি ফিরেছে তারা। অভিভাবকের জিম্মায় সোহাগী ও শারমিনকে পুলিশ তুলে দিয়েছে তাদের হাতে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই সকালে প্রাইভেট পড়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় গিরীশনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের নূর হোসেনের মেয়ে সোহাগী খতুন আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে মেয়ে শারমিন খাতুন। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় তাদেরকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয় পরিবারের লোকজন। ওই দিন তাদের সন্ধান না পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিবারের লোকজন বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা সদর থানাকে মৌখিকভাবে অবহিত করে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তোজাম্মেল হোসেন ঘটনার বর্ণনা শুনে প্রযুক্তির সহযোগিতায় শারমিন ও সোহাগীকে উদ্ধারে তৎতপরতা শুরু করে দেয়ে। পুলিশ প্রযুক্তি মারফত জানতে পারে তারা ঢাকা সাভারের রেডিও কলোনি নামক জায়গায় অবস্থান করছে। বিষয়টি সেখানকার পুলিশকে অবহিত করে এবং তাদের ছবি পাঠিয়ে দেয়। সেখানকার পুলিশের সহায়তায় গোবরগাড়া গ্রামের আশকার আলীর সহযোগিতায় গতকাল শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে সোহাগী ও শারমিন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হাজির হয়। পরে তাদের মুখের বর্ণনা শুনে জানা যায় তারা সংসারের অভাব ঘোচাতে আবেগে বাড়ি ছাড়ে। কারো প্রলোচনায় না। ঘটনার দিন সরোজগঞ্জ বাজার থেকে পরিবহনযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় তারা। উদ্দেশ্য গার্মেন্টসে কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। সেই সাথে সংসারের সচ্ছলতা আনবে। পরিবহনের মধ্যে জনৈক এক মহিলার সাথে পরিচয় হয় তাদের। অনেকটা গায়ে পেতে সোহাগী ও শারমিনের সাথে খাতের জমায় ওই মহিলা। রাতে ঢাকা সাভারে নেমে ওই মহিলা সোহাগীর কাছে থাকা ১১ হাজার টাকা এবং শারমিনের নিকটে থাকা ৯ হাজার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। সকালে ওই মহিলা তাদেরকে একটি টিনের ঘরভাড়া করে দেয় এবং খাবারের জন্য হাড়ি পাতিল ও চাল কিনে দেয়। ঘটনার ৫ দিনের মাতায় গতকাল শনিবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকা সাভার থেকে বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হাজির হয় তারা। পরে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিভাবকের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়। প্রশ্ন উঠেছে সংসারের দৈন্যতা ঘোচাতে আবেগে না কী বাড়ির প্রতি তাদের ঘৃণা জন্মানোর কারণে বাড়ি ছাড়লো। তবে বড় ধরনের কোনো দূর্ঘটনা ঘটার আগেই পুলিশি তৎতপরতায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তান ফেরত পাওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তোজাম্মেল হোসেন জানান, সোহাগী ও শারমিন ছাত্রী হিসেবে কম মেধাবী হওয়ায় পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে চাপে রাখতো এবং পড়াশোনা করাতে যে টাকা খরচ হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলতো। পরিবারের এ ধরনের মানসিক চাপে তারা নিজের ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে ছিলো।