শোকের দিনে আনন্দ উল্লাস : তীব্র সমালোচনার মুখে গাংনীর কুমারীডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক

গাংনী প্রতিনিধি: মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাতি শোকাচ্ছন্ন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষ পালন করছে দিবসটি। সারাদেশের মানুষ বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে স্মরণ করেছে ৫২’র ভাষা শহীদদের। শোক র‌্যালি, আলোচনাসভা ও শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে মেহেরপুর গাংনীতেও পালিত হয়েছে মাতৃভাষা দিবস। অথচ ব্যতিক্রম চোখে পড়েছে কুমারীডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে ছিলো না কোনো আয়োজন। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে তুলে ধরা হয়নি ভাষা দিবসের গুরুত্ব। শোক পালনের পরিবর্তে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হয়েছে পিকনিকের আনন্দ উল্লাসে। যা শোক দিবসে শুধু কালিমা লাগানো নয়, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দেশ সম্পর্কে জানার পথও রুদ্ধ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় এখন তোলপাড় চলছে। বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসার ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কুমারীডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাজ্জেল হকসহ কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় দুটি বাসযোগে বিদ্যালয় থেকে বনভোজনের উদ্দেশে রওনা দেন। দিনাজপুরের দুটি বনভোজন কেন্দ্রে দিনভর আনন্দ-উল্লাস, খাওয়া-দাওয়া ও গাড়ি ভাড়া বাবদ ছাত্রছাত্রী প্রতি ৩শ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। বনভোজনে যাওয়ায় গতকাল মাতৃভাষা দিবসের দিনে বিদ্যালয়ের সব কক্ষ ছিলো তালাবদ্ধ। বিদ্যালয়ে ছিলো না ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পদচারণা। শোকের দিনে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বনভোজনের খবরে এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলা ভাষাপ্রেমী অনেকেই। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও জানানো হয়।
ওই এলাকার কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা আসে শেখার জন্য। পাঠ্যসূচি ছাড়াও তাদের নৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দিয়ে থাকেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও ভাষার জন্য মানুষ বুকের রক্ত দেয়নি। শুধু দেশেই নয় বিশ্বের নানা দেশের মানুষ গভীর শোকের সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। এমন একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবসকে অগ্রাহ্য করা খুবই দুঃখজনক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যে কাজটি করেছেন তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের কাছ থেকে কি শিখবে? এ বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ উচিত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য খোড়া যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের চাপে তাকে বনভোজনের আয়োজন করতে হয়েছে। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদ আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কামাল হোসেন ওরফে মাছ কামাল জানান, শিক্ষকরা ভুল করেছেন তাদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার বলেন, মাতৃভাষা দিবসের অবমাননা করে বনভোজনে যাওয়ার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক তাকে অবহিত করেননি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাফতরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।