শীতের আগমনে কারিগরদের মুখে হাসির ঝিলিক

দামুড়হুদায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে লেপ-তোষকের তুলো ধুনার কাজ

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় শীতের আগমনে লেপ-তোষকের কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। একটু যেন ফুরসুত নেই। সেই ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তুলো ধুনা আর সেলাইয়ের কাজ। মুখে গামছা বেঁধে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করলেও কারিগরদের মধ্যে নেই কোনো ক্লান্তির ছাপ। নাওয়া-খাওয়া ফেলে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬টি লেপের তুলো ধুনে সেলাই শেষ করা যেন চাইই চাই। এ যেন নিজের সাথেই চলছে নিজের প্রতিযোগিতা। এবার কিছুটা আগে ভাগেই শীত মরসুম শুরু হওয়ায় কারিগরদের মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক। গ্রামবাংলার পল্লি বধূদের মধ্যে সেই আগের মতো আর কাঁথা সেলাইয়ের প্রতিযোগিতা না থাকায় বেশ খোশ মেজাজেই রয়েছেন লেপ-তোষকের কারিগররা।

দামুড়হুদা উপজেলার সদরে গ্রামীণফোন টাউয়ারের পাশেই নূর আলমের লেপ-তোষকের দোকান। ওই দোকানের কারিগর উপজেলার ধান্যঘরার ওলি হোসেনের ছেলে স্বপন গত বুধবার সন্ধ্যার পর একটা পাতলা ফ্যানফেনে গেঞ্জি গাঁয়ে মুখে গামছা বেঁধে এক মনে কাজ করছিলো। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম তুলো ধুনার দৃশ্য। ক্যামেরা বের করে ছবি তোলার সময় ক্যামেরার আলো চোখ লাগার সাথে সাথে কিছুটা চমকে উঠলেন। মুখের গামছা সরিয়ে একগাল হেসে বললেন ছবি তুলছেন। আমাদের নিয়ে নিউজ করবেন নাকি? কথাগুলো মুখে বললেও থেমে নেই তার দু হাত। সপাং সপাং শব্দে করে চলেছে তুলো ধুনার কাজ। কাজ করতে করতেই চললো আলাপচারিতা।

কারিগর স্বপন জানান, ভোর থেকে কাজ শুরু করি। প্রতিদিন ৪/৫টা করে লেপ তৈরি করছি। ছোট, বড়, মাঝারি লেপের প্রকারভেদে লেপ প্রতি ৭০ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেন দোকানমালিক। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। সারা বছরের মধ্যে মাস তিন থেকে ৪ মাস কাজ বেশি হয়। আর এ আয় দিয়েই আমাদের পুরো বছর চলতে হয়। শীত লাগছে না? জিজ্ঞাসা করতেই আবারও সেই হাসি। যে কদিন শীত আছে সেই ক’দিনই তো আমাদের ইনকাম। টাকা ইনকাম হলে শীত লাগে নাকি? এ কথার উত্তরেও যেন আমাকেই ছুঁড়ে দিলো পাল্টা প্রশ্ন। আমিও একটু হেসে বললাম তাতো ঠিকই। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে তো? কাজ করতে করতেই-উত্তর দু-একদিন না খেলে মানুষ মরে না। কাজের চাপ কেমন? মোটামুটি। তবে দু-এক সপ্তা পর কাজের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। কাজ করতে করতে স্বপন এবার অনেকটা অভিযোগের সুরে বললেন, বাজারে প্রায় সকল জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু বৃদ্ধি পাইনি আমাদের মজুরি।

দামুড়হুদা বাজারের কাপড়ব্যবসায়ী শুকুর আলীর লেপ-তোষকের দোকানের কারিগর কেশবপুরের লিটন জানান, আমি মূলত কাজ করি চুয়াডাঙ্গার মৌসুমী ক্লথ স্টোরে। সকাল থেকে সারাদিন ওখানেই কাজ করি আর সন্ধ্যার পর এখানে। এখন সিজেন তাই কাজের চাপ একটু বেশি। সে কারণেই দুজাগায় কাজ করছি। প্রতিদিন গড়ে ৫/৬টি লেপ তৈরি করা সম্ভব হয়। গড়ে ৭শ টাকার মতো আয় হচ্ছে। একটা জাজিম করলে আড়াইশ টাকার মতো মজুরি পাওয়া যায়। এছাড়া লেপ ও তোষক প্রতি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা পর্যন্ত দেয়।