শিক্ষকরা সংক্ষিপ্ত দাবিনামা জমা দেবেন আজ

স্টাফ রিপোর্টার: অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদমর্যাদার অবনমন ও গ্রেড বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গতকাল শনিবার ষষ্ঠ দিনের মতো কর্মবিরতি অব্যাহত ছিলো। এর মধ্যে একবার শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায়ও বসেন। এরই সূত্র ধরে সংক্ষিপ্ত দাবির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আজ রবিবার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবেন শিক্ষকরা। এর আগে সকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভা ডাকা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এই সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কর্মবিরতির ষষ্ঠ দিনে শিক্ষক নেতা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অচলাবস্থা কাটার ইঙ্গিত মিলেছে। শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার লন্ডন যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাঁরা মন্ত্রণালয়ে আবারও তাঁদের প্রস্তাব জমা দেবেন। আশা করি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’ আর শিক্ষক নেতারা গতকাল বলেছেন, ‘নানামুখী তত্পরতা চলছে। যদিও সরকারের কারো সঙ্গে এখনো আমরা আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসিনি। তার পরও আশা করছি দ্রুতই আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারব।’ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চললেও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস বা প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। আমরা কাল (আজ রবিবার) সকালে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসব। সবার মতামত নিয়ে তা সংক্ষিপ্তাকারে বিকেলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেব। আমাদের দাবি চারটিই থাকছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে বেতন কাঠামোর সংশোধনই এখন মূল দাবি। সেটাই মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তৃতীয় গ্রেডভুক্ত। সপ্তম বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তাঁরা গ্রেড-১-এ পৌঁছেছেন। কিন্তু অষ্টম বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এত দিন শিক্ষকরা সিলেকশন গ্রেডের দাবি করলেও এখন অন্য কোনো উপায়ে হলেও প্রথম গ্রেডে যেতে চান। অন্তত মোট অধ্যাপকের ২৫ শতাংশকে বিকল্প উপায়ে হলেও গ্রেড-১-এ দেখতে চান তাঁরা। আর গ্রেড-১ থেকে কিছুসংখ্যক সিনিয়র শিক্ষককে সিনিয়র অধ্যাপকের সমান মর্যাদায় দেখতে চান তাঁরা। এই বিষয়গুলোই সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবে থাকতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। তবে অন্য ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি শুধু শুক্রবার। গতকাল কোথাও ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষকরা। আগামীকাল সোমবারও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি অব্যহত থাকবে। তবে সিঙ্গাপুরে মেডিক্যাল চেকআপ ও চীনে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত বুধবার থেকে দেশের বাইরে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাঁর আগামীকাল ফেরার কথা। এদিকে লন্ডনে ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ওয়ার্ল্ড এডুকেশন ফোরামের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার রাতে ঢাকা ছেড়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আগামী মঙ্গলবার তিনি ফিরবেন। শিক্ষামন্ত্রী তাঁর অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের ব্যাপার দেখার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে। তবে দুই মন্ত্রী দেশে না ফেরা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
জানতে চাইলে শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক এটা আমরা চাই না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। তবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।’