লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে : কিন্ত অনিয়ম সহ্য করা হবে না

চুয়াডাঙ্গা ইটভাটা মালিক সমিতির সাথে মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘ইটভাটার লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে। কিন্ত, শর্তানুযায়ী প্রয়োজনীয় সবকাগজপত্র ও অনুমোদন থাকতে হবে। অনিয়ম আছে, নিয়মের মধ্যে আনা যায় সেটা দেখবো। আইনে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। জনপ্রতিনিধিরা আইন করেছেন। আমরা প্রতিপালন করি। আইন পরিবর্তন করেন। আমরা দেখবো। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসনের সাথে ইটভাটা মালিক সমিতির সদস্যদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এসব মন্তব্য করেন।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। এতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব এবং জেলা জিগজ্যাগ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লাভলুসহ সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, শুধু পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র থাকলেই হবে না, এ সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। যারা নিয়ম মানবে না, তারা চলতে পারবে না। এখন থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য ইউএনওদের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জিগজ্যাগ ভাটা যেগুলো আছে, সেগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হবে এবং যাদের জিগজ্যাগ নেই, তাদেরেক দ্রুত জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে লাইসেন্স নিতে হবে। কতদিনের মধ্যে তা সম্ভব তা ইটভাটা মালিক সমিতিকে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ইটবাহী ট্রাক্টর রাস্তায় ওঠার সময় চাকা ধুয়ে তুলতে হবে। ভাটার মাটি যাতে রাস্তায় না যায়, সেজন্য ৩ দিনের মধ্যে সীমানার মধ্যে ড্রেন তৈরি করে ধুলো-কাদা প্রতিরোধ করতে হবে। এসব আইন মানা না হলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। কারো কোনো সুপারিশ আমলে নেয়া হবে না। তিনি হুঁশিয়ারী দেন, মাটির টপ সয়েল কোনোভাবেই কাটা যাবে না। আমরা জেলার ভরাট হয়ে যাওয়া চিত্রা নদী ও সরকারি জলমহালগুলো স্বেচ্ছাশ্রমে খনন ও সেখান থেকে ইটভাটার মাটির জোগান দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করছি। এছাড়া, চিত্রা নদীর দু পারে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি এ সময় আরও জানান, মাথাভাঙ্গা ও ভৈরব নদী সরকারিভাবে খনন করা হবে। পুকুর তৈরি করতে হলেও সরকারি অনুমতি নিতে হবে। আমাদের ওপর আইন মানানোর জন্য প্রেসার আছে। আইন মেনে নিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করা হবে। মতবিনিময় সভার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জসীম উদ্দীন বলেন, ‘সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের পক্ষে এগিয়ে যাবো।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ইটভাটার লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ১১টি পূর্বশর্ত মানতে হয়। চুয়াডাঙ্গার বেশিরভাগ ইটভাটাই এসব শর্ত পূরণ না করে দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। জেলায় প্রায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৩০টির মত ভাটা জিগজ্যাগ পদ্ধতি চালু রয়েছে। বাদবাকি রয়েছে কাঠ ও টিনের চিমনীতে। যা একেবারেই বৈধ নয়। এতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। অথচ, এ বিষয়টি এতোদিন মনে হয়েছে দেখার কেউ নেই। বর্তমান জেলা প্রশাসক গত ১১ মে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এসব অনিয়ম দূর করতে বিগত দেড়মাস আগে ভাটা মালিকদের চিঠি দিয়ে আইনের মধ্যে আসতে বলেছেন।
শর্তগুলো হচ্ছে- নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হবে। জমির মালিকানার কাগজপত্র দেখাতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। জিগজ্যাক চিমনির স্কেচ জমা দিতে হবে। ২ একর জমির বাণিজ্যিক হারে খাজনা পরিশোধ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনাপত্তিপত্র থাকতে হবে। কৃষি বিভাগের অনাপত্তিপত্র দেখাতে হবে। বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র দেখাতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের অনাপত্তিপত্র দেখাতে হবে। নির্ধারিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এসব শর্তপূরণ করেই ইটভাটা চালু করতে হবে।