যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যৌন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্তকৃত সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বীকৃতি : সচেতন মহলে সমালোচনা

স্টাফ রিপোর্টার: যে বিদ্যালয়ে ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বিচারের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছে সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করে সেই বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষককে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানির পর সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শিক্ষা বিভাগের এই সিদ্ধান্তকে যৌন হয়রানির বিষয়টি যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি তুচ্ছ ঘটনা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে যৌন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্তকৃত শিক্ষক আহাদ আলীর প্রতিষ্ঠান ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানাকে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। গত রোববার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে রেবেকা সুলতানাসহ ৭৪ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে প্রতি শিক্ষার্থী ৫শ টাকা, সহকারি শিক্ষক ১ হাজার ৩শ টাকা, প্রধান শিক্ষককে ১ হাজার ৮শ টাকা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ২ হাজার ৫শ টাকা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। প্রায় ৫৩ হাজার টাকা করে প্রতি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কৃত করা হয়। জেলায় সর্বমোট প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার আজাহার আলী স্বাক্ষরিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ জেলা পর্যায়ের চূড়ান্ত ফলাফলে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানাকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আলমডাঙ্গার হারদী মীর শামসুদ্দিন আহমদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফসর মো. কামরুজ্জামান ও বদরগঞ্জ বাকী বিল্লাহ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাওলাদার। শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ, হাসাদহ মডেল ফাযিল মাদরাসার শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে আব্দুল মতিন নির্বাচিত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট সাংবাদিক এমএ মামুন জানান, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয় সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পুরস্কৃত জাতীর জন্য লজ্জাকর। বরঞ্চ এ ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করা প্রয়োজন ছিলো। তা না করে সেই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পুরস্কৃত করার মানেই প্রদীপের নিচে অন্ধকারের শামিল। এ ধরণের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষক-অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব জানান, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্বাচন যথাযথ হয়নি বলে মনে করেন তিনি।