যা ঘটেনি তা নিয়েও কথা বলে এইচআরডব্লিউ

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে গুম এবং গুপ্ত বন্দিশালা-সংক্রান্ত এইচআরডবিস্নউর প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা করেছে এই সংগঠনটি। তাদের বর্তমান প্রতিবেদনটিও সেই প্রচারণার অংশ।’ দেশে যা ঘটেনি বিভিন্ন সময়ে সেসব নিয়েও তারা কথা বলেছে। সেজন্য তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে, আমরা তা একসেপ্ট করছি না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবিস্নউ) তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০১৩ সাল থেকে বিরোধী দলের কর্মীসহ কয়েকশ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করেছে। তাদের গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে। এইচআরডবিস্নউর প্রতিবেদন বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আছে। তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা (এইচআরডবিস্নউ) এত গায়ে পড়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে কেন? মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আপনি কাকে গুম বা নিখোঁজ বলবেন? এখানে পাওনাদারের দাবি না মেটাতে পেরে ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করে কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যায়। আমরা এদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কাউকে আটক করলে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতের সামনে হাজির করি। তাই প্রতিবেদনটির তীব্র প্রতিবাদ করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমনভাবে কাউকে ক্ষমতা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এসব কথা অমূলক। আমাদের একটি গুলি ফুটলেও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে তার তদন্ত করতে হয়। সময় নিয়ে এর তদন্ত হয়। কোনো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার নজির অবশ্যই আছে।’

এইচআরডব্লিউ তালিকা দিক: কাজী রিয়াজুল গুমের ঘটনা বেড়েছে- এ কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তবে তার কথা, গুম এবং নিখোঁজের ঘটনার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা দরকার। রিয়াজুল হক বলেন, ‘গুমের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রের উচিত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথম কথা, গুম কখনই কাম্য নয়। তবে কেউ এর শিকার হলে সরকারের উচিত এর বিচার করা। এ ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। কাউকে বাঁচিয়ে রাখা বা না রাখার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে_ এইচআরডবিস্নউর এশিয়া-বিষয়ক পরিচালক এ ব্র্যাড অ্যাডামসের এ মন্তব্যের সঙ্গে অবশ্য দ্বিমত প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এখানে ঢালাও মন্তব্য করা হয়েছে। কাউকে এমন সুযোগ দেয়া হয়নি। এটা অসত্য কথা।’ কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা যদি এইচআরডবিস্নউর হাতে থাকে, তবে তা আমাদের দিক। আমরা এসব ঘটনার তদন্ত করব। এবং সরকারের কাছে জবাব চাইব।’
নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক: শীপা হাফিজা মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, ‘আমরাও বলছি গুমের ঘটনা বাড়ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের ব্যাপার।’ তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাই যদি বেশি গুমের শিকার হন তবে নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কোনো মানুষেরই এমন পরিণতি হওয়া মোটেও গ্রাহ্য করা যায় না। শীপা হাফিজা বলেন, গুম মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ বিষয়ে এইচআরডবিস্নউর মতো তারাও সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছেন, যেন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়।

অধিকারের উদ্বেগ: আরেক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলান বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার অনেক পরে অনেক ব্যক্তির লাশ মেলে। অনেককে আবার অনেক দিন পর হঠাৎ কোনো জায়গায় উদভ্রান্তের মতো চলাফেরা করতে দেখা যায়। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে আমরা শুনেছি, তাদের স্বজনকে তুলে নেয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। এসব বিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলে চরম অবহেলার শিকার হতে হয় স্বজনদের। শুধু জিডি গ্রহণেই শেষ হয়ে যায় তাদের কাজ। এরপর নিখোঁজদের ফিরিয়ে আনার কোনো তাগিদ দেখা যায় না বলেই স্বজনেরা আমাদের জানিয়েছেন।’