মেহেরপুর পিরোজপুর গ্রামের ইসাহক আলী সফল পেয়ারাচাষি

 

মহাসিন আলী: মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসাহক আলী পেয়ারাচাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তার বাগানের পেয়ারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার অর্ধশত বেকার যুবক-যুবতীর। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকে পেয়ারাচাষ করেছেন এবং অনেকে চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মৃত জান মহাম্মদের ছেলে ইসাহক আলী। তিনি পার্শ্ববর্তী ছটাংগাঁর মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ১৮ বিঘা জমি থেকে পেয়ারা উঠছে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ২৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন। এর মরসুমে তিনি আরো ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। আগামী বছর তার ৩০ বিঘা জমি থেকে পেয়ারা উঠবে। সেচ-সার ও লেবার খরচ বাদে তার বাকিটা লাভ থাকবে। এভাবে তিনি কমপক্ষে পাঁচ বছর বাগান থেকে ভালো ফলন পাবেন। প্রতি বছর তার কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশাবাদী পেয়ারা চাষি ইসাহক আলী।

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আমঝুপি-পিরোজপুর সড়কের ধারে ছটাংগাঁর মাঠ। ওই মাঠে ভেতরে বাঁশের বেড়া ঘেরা ইসাহক আলীর পেয়ারার বাগান। বাগানে গিয়ে দেখা যায় ইসাহক আলী লেবারদের সাথে বাগান থেকে পেয়ারা ভাঙছেন ও গ্রেডিং করছেন। ওই সময় লেবার ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোদাজ্জেল হোসেন। তিনি পিরোজপুর ইউনিয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত।

মিলন আলী,বল্টুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন লোক গাছ থেকে পেয়ারা ভাঙা,বস্তা ভরে আনা,গ্রেডিং করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। মিলন ও বল্টু জানায়,এ পেয়ারার বাগানে কাজ করে তাদের মতো বেশ কিছু বেকার যুবক-যুবতীর প্রায় সারা বছরের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

ইসাহক আলীর ছেলে লাবলু হোসেন জানান,প্রায় সারা দিন তিনি লেবারদের সাথে পেয়ারাবাগান দেখাশুনা করেন। পেয়ারা ভাঙা,গ্রেডিং করা,বাগান পরিচর্যা করা ও সেচ-সার দেয়ার জন্য প্রতি দিন বাগানে ৫০ জন লেবার পরিচালনা করতে হয় তাকে।ইসাহক আলী জানান,তিনি দুবছরে মোট ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ করেছে। তার বাগানে আগাম লাগানো ১৮ বিঘা জমি থেকে পেয়ারা উঠছে। ইতোমধ্যে তার খরচের টাকা উঠে গেছে। বছরে দুবার গাছে পেয়ারা আসে। প্রথম পর্যায়ে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত বাগান থেকে পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে অগ্রাহয়ণ মাস থেকে বাগানের পেয়ারা উঠবে এবং চৈত্র মাস পর্যন্ত পেয়ারা ভাঙা যাবে। তিনি তার বাগানের পেয়ারায় বিষ দেন না। ফলকে বিষমুক্ত রাখতে ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে গাছের পেয়ারা ছোট ছোট পলিথিন (বৈধ পিপি) প্যাকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে মুখ বেঁধে দেন। তার বাগানের বিষমুক্ত পেয়ারার চাহিদা রাজধানী ঢাকা,বরিশাল,ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। এবছর তিনি খরচ বাদে ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন। পরবর্তী পাঁচ বছর খরচ বাদে ৩০ বিঘা জমি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টাকা করে লাভ করবেন।

পিরোজপুর গ্রামের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন,ইসাহক আলীর বাগানের পেয়ারা ইতোমধ্যে একালাকার মানুষের কাছে বাংলার আপেল খ্যাতি পেয়েছে। পেয়ারা চাষে তার সফলতা দেখে আমি ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।পিরোজপুর গ্রামের একাধিক চাষি অভিযোগ করলেন,চাষিদের বাগান করার আগ্রহ থাকলেও ফলের মরসুমে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। চাঁদা দাবির কাছে হতাহতের কারণ ঘটে থাকে। যে কারণে বাগান করা থেকে অনেক চাষি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

পেয়ারা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান,পিরোজপুরের ইসাহক আলীর বাগানের পেয়ারা এক-দেড় মাস ধরে বিক্রি করছি। প্রথম দিকে ৮০ টাকা কেজি দরে এবং বর্তমানে ৬০ টাকা কেজি দরে পেয়ারা কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। মেহেরপুরের বাজারে বিষমুক্ত এ পেয়ারার চাহিদা যথেষ্ঠ।

পিরোজপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোদাজ্জেল হোসেন জানান,ইসাহক আলীর পেয়ারা বাগানে তিনি প্রায় দিনই আসেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। তার বাগানের পেয়ারা এলাকার খ্যাতি ছড়িয়েছে। তার দেখাদেখি একই মাঠে মঞ্জুর হোসেন ২৬ বিঘা,আনছার আলী আড়াই বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। বর্তমানে পিরোজপুর এলাকার মাঠে প্রায় একশ’ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। ইসাহক আলী এলাকার চাষীদের পথ প্রদর্শক।