মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান স্কুল শিক্ষক ফারুক হুসাইনের দাফন সম্পন্ন

 

মেহেরপুর অফিস: হাজার হাজার ভক্তকে কাঁদিয়ে চির নিন্দ্রায় শায়িত হলেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান স্কুল শিক্ষক ফারুক হুসাইল। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় তার নিজ গ্রাম আশরাফপুর স্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির মাও. তাজউদ্দিন নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। তার নামাজে জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাসুদ অরুন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. মারুফ আহমেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পৌর জামায়াতের আমির আলহাজ মাও. মাহাবুবুল আলম, মেহেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোবারক হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আনারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবুল হাশেম, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাও. রুহুল আমিন, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আলহাজ সিদ্দিকুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, সাংগাঠনিক সম্পাদক মাও. রুহুল আমিন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. জামালউদ্দিন, গাংনী উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. রবিউল ইসলাম, পৌর সুরা সদস্য ডা. আব্দুস সালাম, জেলা স্বাধীনতা চিকিৎস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু তাহের সিদ্দিকী, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি শাকিল হোসেন, আশরাফপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহাজুদ্দিনসহ তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তিনি মেহেরপুর শহরের মিয়াপাড়াস্থ তার বড় ভাইয়ের জামাই আব্দুল ওহাব মাস্টারের বাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ফারুক হুসাইন।

ফারুক হোসেনের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত: ফারুক হুসাইন ১৯৬৩ সালে ১ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আনছার আলী মোল্লা ও রাবেয়া বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯ ভাই-বোনের মধ্যে ৪র্থ ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি মুজিবনগর উপজেলার দারিয়ারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৮৩ সালে মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৯০ সালে রাজবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে বিএ ও ১৯৯৫ সালে খুলনা সরকারি বিএল কলেজ থেকে এমএ পাশ করেন।

১৯৮৭ সালে নিজ হাতে গড়া নিজ গ্রাম আশরাফপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ও গ্রাম্য তাবলীগ জামায়াতের আমীর ছিলেন। তিনি মেহেরপুর জেলা ফুটবল দলের এক সময়কার তুখোড় ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৯০ সালে জামায়াতের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে জামায়াত ইসলামিতে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালে জামায়াতের রুকুন হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি আমদহ ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামির আমীর নির্বাচিত হন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি সদর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও আমীর নির্বাচিত হন। ২০০২ সালের আমদহ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সুরা সদস্য নির্বাচিত হন।

নিজ গ্রামে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে আশরাফপুর গ্রামে মসজিদ ও আশরাফপুর দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আশরাফপুর ঈদগাহ  ময়দানের উন্নয়ন করেন। তিনি আশরাফপুর জনকল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ও আল ফারুক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৩-২০১৪ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৫-২০১৬ সেশনের জন্য জেলা জামায়াত ইসলামির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। এদিকে জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে জেলা আমীর মাও. তাজ উদ্দিন মরহুমের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক শোক বার্তায় বলেন, তার মৃত্যুতে জেলা জামায়াতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।