মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত

দরিদ্র দুস্থ ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই : প্রয়োজন শীতবস্ত্র বিতরণ  

 

মেহেরপুর অফিস/স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরে শীত জেঁকে বসেছে। শীতে যবুথুবু মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ। গবাদি পশুরও অভিন্ন অবস্থা। কনকনে শীত থেকে কিছুটা উষ্ণতা পেতে শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ খড়কুটোর আগুনে শরীর উষ্ণতা নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ কম দামে শীতবস্ত্র পেতে ফুটপাতের পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে ছুটছেন। এ শীতেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র পাচ্ছে না হতদরিদ্র মানুষ। তবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১০ দশমিক ২, সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ৯ এবং সর্বোচ্চ কক্সবাজারে ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদফতর পূর্ববাভাসে বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় তীব্র শীতে অনেকই বেলা বাড়লেও ছাড়ছে না লেপতোষকের গরম বিছানা। শহর ও গ্রামের অবস্থাশালী মানুষ ও তাদের আদরের দুলালরা গরম বিছানায় শুয়ে শীত উপভোগ করলেও দুস্থ দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। যাদের ভোরেই বের হতে হয় কাজে, কাজ না করলে যাদের মুখে জোটে না এক মুঠো ভাত তাদের কী অবস্থা? তারা বিলম্বে বিছানা ছাড়ার কথা ভাবতেই পারে না। সকাল হতে না হতে বিছানা ছেড়ে সূর্য্যের অপেক্ষার বদলে খড়কুটোতে আগুন ধরিয়ে উষ্ণতা নিয়েই ছোটেন কাজে। আবার কেউ কেউ স্বপ্ল পোশাকেই জোরে হাটতে শূরু করেন।

এলাকার অনেকেই এবারের তীব্র শীত সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, গরম কাপড় তথা শীতবস্ত্রের অভাবে এলাকার হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে কষ্টটা অনেক বেড়ে গেছে। শহর ও গ্রাম-গঞ্জের বাজারের বস্ত্র বিতানগুলোতে শীতবস্ত্রের দাম অনেক বেশি। আবার এবছর এখনও সরকারি-বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের তেমন খবর পাওয়া যায়নি। গরম কাপড় দরিদ্র শ্রেণি ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় তারা নতুন গরম কাপড়ের পরিবর্তে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছুটছেন। মেহেরপুর শহরের গো-হাট, পৌরসভার সামনে ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে পুরোনো কাপড় কেনার দৃশ্য দেখলে তা অনুমান করা যায়। দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে শীতবস্ত্র কিনছেন। আর যারা পুরোনো শীতবস্ত্র কিনতেও অক্ষম হচ্ছেন তারা সকালে ও সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের রাস্তা কিংবা বাড়ির উঠানে আগুন জ্বালিয়ে শরীর তাপিয়ে নিচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঝুঁকিটাও কম নয়। আগুন তাপাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা প্রতি বছর কম-বেশি শোনা যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর শহরের সরকারি কলেজপাড়ার গোলাম মোস্তফার স্ত্রী বেলি খাতুন (৪২) শীত নিবারণে বাড়ির উঠানে খড়কুটোয় জ্বালানো আগুন তাপাতে যান। ওই সময় তার পরনের শাড়ির আঁচলে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এখনও পৌষ মাস শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে মাঘ মাস। মাঘের শীতও কাপিয়ে তুলবে হয়তো এলাকার ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষকে। শীতবস্ত্র বিতরণে এবছর প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। যে কারণে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। ওই হাড় কাঁপানো শীতে ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষকে শীতের কষ্ট লাঘবে সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মানুষ।