মেহেরপুর গাংনীর ধানখোলায় সাপ আতঙ্ক

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীর ধানখোলা গ্রামের বাগানপাড়ার বাসিন্দারা সাপ আতঙ্কে দিশেহারা।  প্রতিদিনই কারো না কারো সাপে দংশন করছে বলে প্রচার হলেও এর স্বপক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারছেন না গ্রামবাসী। শুধু মনের ভ্রান্ত ধারণা থেকে আতঙ্কিত হচ্ছে। বিষয়টিকে গণমনস্তাতিক রোগ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা। তবে সাপের কামড়ের ভ্রান্ত ধারণার পেছনে কারো অসৎ উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ওই পাড়া থেকে কয়েকজন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাসও শুরু করেছেন। বিষয়টির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গ্রামবাসী।

কয়েকদিন আগে বাগানপাড়ার মরিয়র নামের এক মধ্য বসয়ী নারীর হাতে সাপে দংশন করেছে বলে তিনি পরিবারকে জানান। তার হাত ফুলে পড়ে। যন্ত্রণা শুরু হয়। পরে স্থানীয় এক ওঝার পানি পড়া খেয়ে তার এ যন্ত্রণা ভালো হয়ে যায়। এ ঘটনায় কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন কাজকর্ম বন্ধ হতে চলেছে। আবার দুটি পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে গিয়ে বসবাস করছেন। সাপে কমড়ানোর আতঙ্কে বাগানপাড়া জুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, মরিয়র যে লক্ষণের কথা বলেছেন তা সাপে দংশনের কোনো লক্ষণ নয়। কোনো পোকামাকড়ে কামড়াতে পারে। মনের ভুল থেকে সাপে দংশন ভেবেছেন।

এদিকে মরিয়রের ওই ঘটনার পর তার প্রতেবেশী একই পরিবারের ১৫ জনকে কয়েকদিনের মধ্যে সাপ দংশন করেছে বলে দাবি করেন তারা। ধানখোলা গ্রামের বাগানপাড়ার মৃত আনার উদ্দীনের ছেলে মোতালেব হোসেন ও বদর উদ্দীন জানান, তাদের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীসহ পরিবারের প্রায় সবাইকে সাপে কেটেছে। তবে তারা কোনো সাপ দেখতে পাননি। সাপে কামড়ানোর স্থানে ফুলে যায় এবং শরীরে জ্বালাপোড়া অনুভব করতে থাকে। এভাবে তাদের বাড়ির আশেপাশের কয়েকটি বাড়িতে অন্তত ৪০ জনের এভাবে লক্ষণ দেখা যায়। ধানখোলা বাজারের এক ওঝার পানি পড়া খেয়ে তারা সুস্থ হয়েছেন।

সাপ কেন দেখতে পাননি? সাপে কামড়ানো বোঝা যায় কিভাবে? ওঝা কবিরাজ সাপের বিষ নামাতে পারে কি-না? এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি বদর উদ্দীন। শুধুমাত্র মনের বিশ্বাস থেকে তারা এমন প্রচার করছে বলে জানান এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে দেখা মেলে ধানখোলা বাজারের সেই ওঝার। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার তার কাছে অন্তত ২০ জন পানি পড়া নিয়ে খেয়েছেন। তবে যারা ওঝার কাছে নিয়ে পানি পড়া নিয়েছেন সেই ওঝাই খুললেন রহস্যের জট। ওঝা বলেন, আমি জীবনে সাপ দংশনের বহুত রোগী দেখেছি। কিন্তু ধানখোলা বাগানপাড়া থেকে যারা আমার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের কারো সাপ দংশন করেনি। কিন্তু এই সত্য বলা হলেও তার মানতে নারাজ। তাদের চাপাচাপিতে পানি পড়া দিতে বাধ্য হচ্ছি। মূলত মনের মধ্যে এক প্রকার সাপ আতঙ্ক থেকেই তারা একে অন্যের দেখাদেখি আতঙ্কিত হচ্ছেন।

এদিকে ধানখোলা গ্রামের বাগানপাড়ায় দেখা মিললো এক বয়োবৃদ্ধ ওঝার সাথে। তার নাম খোকন মিয়া। জানতে  চাইলে তিনিও সদুত্তোর দিতে ব্যর্থ। সাপে এভাবে কাউকে দংশন করতে পারে না বলেও মত দিলেন খোকন। তবে স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খোকন মিয়া তুলারাশী কি-না তা গ্রামাবাসী নিশ্চিত নয়। তারপরেও তিনি হাত চালক দিয়ে বিষ নামাতে পারেন বলে দাবি করে আসছেন। মূলত যারা সাপ দংশন আতঙ্কে ভুগছেন তাদের শরীরে তিনি হাত চালক দিয়েছেন। সাপ দংশন করেছে বলে খোকন মিয়া প্রথমে নিশ্চিত করেছেন। তাই খোকন মিয়া ও তার পরিবারের প্রতি বিশেষ নজরদারি করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ গ্রামবাসীর।

চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের মনের মধ্যে কোনো বিষয়ে অনেক সময় অন্ধ বিশ্বাস স্থাপিত হয়। এ অন্ধ বিশ্বাস থেকে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে। যার মধ্যদিয়ে ভুল পথে ধাবিত হয়। যেকোনো কারণে অসুস্থ কাউকে দেখে অন্য কেউ অসুস্থতা অনুভব করতে পারে। যা গণমনস্তাতিক রোগ বলে চিকিৎসকরা আখ্যায়িত করে থাকেন। আসলে এটিও তেমন কোনো রোগ নয়। মনের মধ্যে সাহস স্থাপন করতে পারেই এর সমাধান হতে পারে।