মেহেরপুরে ১২ বিলের ৫০ ভাগ জমি বেদখলের অভিযোগ

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরে ১২ বিলের ৫০ ভাগ জমি বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের হরিরামপুর বিলের জমির পরিমাণ সিএস রেকর্ডে প্রায় ১৬২ একর ও এসএ রেকর্ডে ১৫৮ একর। অথচ আরএস রেকর্ডে বিলের জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫২ একরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিলের ১১০ একর জমি চলে গেছে বেশকিছু লোকের দখলে। জেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তেরঘরিয়া বিলটির আয়তন সিএস ও আরএস  রেকর্ড অনুযায়ী ১০৩ একর। আরএস রেকর্ডে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭১ একর। বিলের ৫২ একর জমি ভোগদখল করছেন এলাকার বেশকিছু ব্যক্তি। একইভাবে বেদখল হয়ে গেছে জেলার অন্যান্য বিলের বেশকিছু জমি।

ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী মেহেরপুরের ১২টি বিলে সিএস রেকর্ডে জমির পরিমাণ ছিলো ৮৮৪ একর। আরএস রেকর্ডে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ একরে। অর্থাৎ বিলের ৪৪৭ একর বা প্রায় ৫০ শতাংশ জমিই বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, সিএস নকশায় বিলগুলোর জমি পরিমাণ মতোই ছিলো। পরে এসএ সার্ভে ও আরএস (রিভিশনাল সেটেলমেন্ট) রেকর্ডে জমি ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরিরামপুরের ১১০ একর জমি যাদের দখলে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের একজন জানান, তিনি ক্রয়সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন। তেরঘরিয়া বিলের জমি বেদখলের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তারা জানান, তারা এ সব জমি পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে পেয়েছেন।

মেহেরপুরের বড় বিলগুলোর একটি সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের রুয়াকুলি বিল। সিএস রেকর্ডে বিলটির জমি ছিলো প্রায় ১২২ একর। আরএস জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র পাঁচ একরে। অর্থাৎ এ বিলের ১১৬ একর জমিই বেদখল হয়ে গেছে। এসব জমি দখলে অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তাদের অনেকেই জানান, জমি সরকারি হলে মামলা করে জমির মালিকানা আদায় করুক সরকার। তখন ছেড়ে দেয়া হবে। মেহেরপুর সদরের পিরোজপুর ইউনিয়নে হারদহ বিলটির সিএস ও এসএ রেকর্ডে প্রায় ৪৮ একর জমি ছিলো। অথচ আরএস রেকর্ডে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৪০ একর। বিলের প্রায় ৮ একর জমি এখন গ্রামেরই কিছু লোক ভোগদখল করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নেরই আরেকটি বিল পাটাপোকা। সিএস রেকর্ডে বিলটিতে প্রায় ৯৬ ও এসএ রেকর্ডে প্রায় ৭৮ একর জমি থাকলেও আরএস রেকর্ডে তা কমে দাঁড়ায় ৩০ একরে। বাকি ৬৬ একর জমি ভোগদখলের অভিযোগ উঠেছে আরও কিছু লোকের বিরুদ্ধে, যদিও দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।

ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী একই ইউনিয়নের শোলমারী বিলের জমি ছিলো এসএ রেকর্ডে ৪৮ একর। আরএস রেকর্ডে প্রায় ১ একর জমি বেদখল রয়েছে। গ্রামের যে দুই লোকের বিরুদ্ধে এ জমি দখলের অভিযোগ তারা জানান, দখল করলে সরকার কীভাবে জমির খাজনা নিচ্ছে! গাংনী ইউনিয়নের এলাঙ্গী বিলের সব জমিই বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিএস ও এসএ  রেকর্ডে এ বিলে প্রায় ৩৭ একর জমি থাকলেও আরএস রেকর্ডে সম্পূর্ণ জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। এ দিকে, গাংনী উপজেলার ২০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি বিলের জমি নিজ নামে রেকর্ড করার অভিযোগ উঠেছে। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নে মাইলমারী পদ্মবিলের জমি পুরোপুরি বেদখল হয়ে গেছে বলেও অভিযোগে জানা গেছে। উপজেলার সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। সিএস ও এসএ রেকর্ডে বিলটিতে ২৫ একর থাকলেও আরএস রেকর্ডে কোনো জমি নেই। অভিযুক্তদের অনেকেই জানান, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী এসব জমির মালিক তারা। জমির খাজনাও দিচ্ছেন তারা। জেলার আরেকটি বড় বিল মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের দাদপুর বিল। সিএস ও এসএ  রেকর্ডে বিলের মোট জমি ছিলো ১০৯ একর। আরএস  রেকর্ডে তা নেমে এসেছে মাত্র ৬০ একরে। বাকি ৪৯ একর জমি স্থানীয় ৫৩ জন লোক ভোগদখল করছেন বলে অভিযোগ। তবে বেশকিছু অভিযুক্ত জানান, বৈধ কাগজপত্রেই তারা জমির মালিক। একইভাবে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের বাটিকামারী বিলের প্রায় ৮ একর, একই ইউনিয়নের চাঁদ বিলের চার একর ও মুজিবনগরের বাগোয়ান ইউনিয়নের পদ্মবিলের ১ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বেদখলি জমি উদ্ধারে প্রশাসনের উদ্যোগ অব্যাহত আছে।’ মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, ‘সরকারি বিলগুলোর সম্পত্তি কী পরিমাণ আছে, সে সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য আমার জানা নেই।’