মেহেরপুরের সিংহাটি পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার হওয়া শিশু খুনের নেপথ্য উন্মোচন

 

পথের কাটা সরাতেই মায়ের দ্বিতীয় স্বামী খুন করে শিশু আরাফাতকে

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলা সদরের সিংহাটি গ্রামের পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু আরাফাত (৩) খুনের নেপথ্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আমঝুপি বাজার থেকে শিশুর মা সাবিনা খাতুন গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছে। দ্বিতীয় স্বামীর পথের কাঁটা সরাতেই আরাফাতকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছেন সাবিনা খাতুন। সদর থানার এসআই খান আলী আকবর এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, সাবিন খাতুন ও তার দ্বিতীয় স্বামী সোনাপুর গ্রামের হায়দার আলীর নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এসআই খান আলী আকবর জানিয়েছেন, গত ২ ডিসেম্বর সিংহাটি গ্রামের মাসুর রানা পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় তিন বছর বয়সী অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। দৈনিক মাথাভাঙ্গায় ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হলে শিশুর পরিচয় মেলে। সে মদনা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে আরাফাত বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। তখন থেকেই তার মা সাবিনা বেগম ও দ্বিতীয় স্বামী হায়দার আলীকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলো পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আমঝুপি বাজার থেকে সাবিনাকে গ্রেফতার করেন এসআই খান আলী আকবর। জিজ্ঞাসাবাদে সাবিনা খুনের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয় পুলিশের কাছে। সাবিনা দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় থেকে ছেলে আরাফাত দাদি ও পিতার কাছে ছিলো। হত্যাকাণ্ডের ৩/৪ দিন আগে সাবিনা মদনাডাঙ্গা থেকে জোরপূর্বক আরাফাতকে নিয়ে যায় হায়দার আলীর বাড়িতে। তবে সাবিনার দাবি, মায়ের মমতার বন্ধনে আরাফাতকে কাছে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেনে নিতে পারছিলেন না হায়দার। ৩০ নভেম্বর হায়দার আলী শিশু আরাফাতকে নিয়ে বাড়ির বাইরে যায়। পরে সে ফিরে এলেও আরাফাত ফিরে আসেনি। হায়দার আলী আরাফাতকে আঘাত করে খুন করে গ্রামের বেশ দূরের গ্রাম সিংহাটি পুকুরে লাশ ফেলে আসে।

সাবিনার বরাত দিয়ে পুলিশ আরো জানিয়েছে, বছর চারেক আগে সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের আয়ুব আলীর মেয়ে সাবিনা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাবর আলীর সাথে। জন্ম নেয় শিশুপুত্র আরাফাত। বছর খানেক আগে বাবর আলী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে সাবিনা দ্বিতীয় বিয়ে করেন সোনাপুর গ্রামের হায়দার আলীর সাথে। এসআই খান আলী আকবর জানিয়েছেন, হয়তো বা সাবিনা খাতুন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। তবে বিষয়টি লুকিয়ে রাখায় তার প্রতি সন্দেহ বেড়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মাথায় ও কানের কাছে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খান আলী আকবর বাদী হয়ে সদর থানায় গতকালই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামি করা হয়েছে সাবিনা খাতুন ও তার দ্বিতীয় স্বামী হায়দার আলীকে। পলাতক হায়দারকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে বলেও পুলিশসূত্রে জানা গেছে।