মেহেরপুরের আমঝুপি-ইসলামনগর সড়কে একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তের তাণ্ডব : ছিনতাইকারীদের নৃশংসতা নিহত কৃষক ইসরাফিল : রজব উদ্ধার

???????????????????????????????

মেহেরপুর অফিস: ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হয়েছেন ইসরাফিল হোসেন নামের এক কৃষক। গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে আমঝুপি বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামনগর-আমঝুপি সড়কে তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। একই স্থান থেকে ছিনতাইকারীদের হাতে অপহৃত আমঝুপি গ্রামের ব্যবসায়ী রজব আলী উদ্ধার হয়েছেন। নিহত ইসরাফিল হোসেন ইসলামনগর গ্রামের মৃত নুর মহাম্মদের ছেলে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে ইসলামনগর গ্রামের ইসরাফিল হোসেন আমঝুপি বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় আমঝুপি-ইসলামনগর মাঠের মধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তার পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে ছিনতাইকারীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। মাত্র দু হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইকারীরা ধারালো রামদা দিয়ে ইসরাফিলকে নির্মমভাবে কুপিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়। ইসরাফিল মাটিতে লুটিয়ে পড়ার ওই দৃশ্য দেখছিলেন পথচারী আমঝুপি গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত কোকিল মিয়ার ছেলে রজব আলী। অসহায় ইসরাফিলকে রক্ষায় তিনি এগিয়ে গেলে তাকে আটক করে ছিনতাইকারীরা। মুখোশধারী দু ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে পার্শ্ববর্তী মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। এ সময় রজব আলীর মোবাইলফোন থেকে তার বন্ধু আমঝুপি গ্রামের কবিরুলের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ছিনতাইকারীরা। এ খবর রজব আলীর বাড়ি ও থানায় পৌছায়। আমঝুপি ও ইসলামনগর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামে অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে এলাকাবাসী। তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের সাথে মাঠে নেমে পড়ে। কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি চলতে থাকে। প্রায় দু ঘন্টা পরে ইসলামনগর মাঠের সড়ক থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ইসরাফিলকে উদ্ধার করে পুলিশ। চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।

পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, রজব আলীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করায় ইসরাফিলের বিষয়টি কেউ-ই জানতে পারেনি। তিনি ফাঁকা মাঠের মধ্যে পড়েছিলেন বিধায় স্থানীয় কারো নজরেও আসেনি। রজব আলীকে খুঁজতে গিয়ে মূলত ইসরাফিলের সন্ধান পায় পুলিশ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকায় তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

এদিকে মুক্তিপণ নিয়ে অপহরণকারী ও রজব আলীর পরিবারের মধ্যে দরকষাকষি চলতে থাকে। কৌশলগত কারণে তারা ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। অপহরণকারীদের কথামতো টাকা নিয়ে মাঠে পৌঁছায় তার পরিবারের লোকজন। তাদের পিছু নেয় পুলিশ। কয়েকটি স্থান বদল করে অপহরণকারীরা রজবকে ফেরত কিংবা টাকা গ্রহণ না করায় দুশ্চিন্তায় পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা। অজানা আতঙ্কে সময় পার করতে থাকেন পরিবার ও গ্রামবাসী। তবে পুলিশ ও গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে অপহরণকারীরা। উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত হিজুলী মাঠের মধ্যে রজব আলীকে ছেড়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে রজব আলীকে উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। এদিকে ইসরাফিলকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। তার মাথা ও হাতের জখম স্থানে বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলার এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবু এহসান মো. ওয়াহেদ রাজু মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ইসরাফিলের মাথার পেছনের দিকে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি গভীর জখম রয়েছে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের কাছে ছিনতাইকারীদের বর্ণনা দিয়েছেন রজব আলী। তার উদ্বৃতি দিয়ে মেহেরপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, অল্প বয়সী মুখোশ পরা দু ছেলে পথরোধ করে ইসরাফিলকে আটক করে। রজব আলীকে অপহরণ করে চোখ বেঁধে যখন তারা মাঠে অবস্থান করছিলো তখন মোবাইলে তার সহযোগিদের সাথে কথা বলছিলো ছিনতাইকারীরা। টাকা দিলে ইসরাফিলকে কোপানো হতো না বলেও তারা বলাবলি করেছে। রজব আলীর দেয়া তথ্য নিয়ে ওই দুজনকে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অপরদিকে ইসরাফিলের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালমর্গে প্রেরণের প্রস্তুতির পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। উদ্ধারের পর রজব আলী জানান, অল্প বয়সী দুজন তাকে ধরে মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। মূলত তারা ছিনতাই করতে সড়কে অবস্থান নিয়েছিলো। কিন্তু ইসরফিলকে কোপানোর পর রজবকে একা পেয়ে অপহরণ করেছিলো। রাতে একলা পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুক্তিপণ আদায় করার ধান্দা ছিলো ওই ছিনতাইকারীদের।