মৃত্যুর পরেও থাকে প্রাণের স্পন্দন!

 

স্টাফ রিপোর্টার: এ যাবত কালের সবচাইতে বৃহৎ মেডিকেল স্টাডি প্রকাশিত হয়েছে, আর তাতে বলা হয়েছে মৃত্যুর পরেও জীবন থাকে। গত চার বছর ধরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালের সেরা ডাক্তার, বিজ্ঞানী, গবেষকগণ রিসার্চ চালিয়ে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য  পেয়েছেন সেটিই রিসাস্কিটেশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং দৈনিক টেলিগ্রাফ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট সেটা পুনঃপ্রকাশ করেছে।

‘লাইফ আফটার ডেথ’ শিরোনামের ওই  স্টাডিতে  দেখানো হয়েছে, ক্লিনিক্যালি ডেড হিসেবে ডাক্তাররা যে সব মুমূর্ষু রোগীকে সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন, সেই সব রোগীরাসহ অন্যান্য বহুসংখ্যক রোগীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা  দেখতে পেয়েছেন মৃত্যুর পরেও জীবন থাকে। জার্নালসহ টেলিগ্রাফে এমন গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশের পর পরই সর্বত্র ঝড় উঠেছে, নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, হার্ট বিট বন্ধ হওয়ার পরে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ব্রেইনের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, কোনভাবেই সম্ভব নয় একজন মানুষের পক্ষে এর পরে জেগে থাকা বা জীবন সম্পর্কে সজাগ থাকা। কিন্তু নতুন এই স্টাডিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবনের স্পন্দন একেবারে এই সময়ের মধ্যে থেমে যাওয়ার পরেও একজন মানুষ আরো তিন মিনিট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন, জীবনের বা প্রাণের অস্তিত্ব থাকে, সে তার আশে পাশে কি ঘটছে একেবারে হুবহু বলতে বা মনে করতে পারে- এবং সেটা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ সাপেক্ষে বলছেন। নিউ ইয়র্ক ষ্টেট ইউনিভার্সিটির এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং সাউথাম্পটন ইউনিভার্সিটির সাবেক রিসার্চ ফেলো ড. সাম পরিণা  যিনি নতুন এই রিসার্চেরও  নেতৃত্বে ছিলেন। ড. সাম পরিণা বলেন, আগে একজন রোগী যিনি মৃত্যুর একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন, সে অবস্থা থেকে ফিরে তিনি সেটাকে হেলুসিনেটরি অবস্থা বলছেন।

একজন-যাকে ডাক্তার এবং নার্সরা  চেষ্টা করছিলেন বাঁচিয়ে রাখার বা জীবনের স্পন্দনে ফিরিয়ে আনার। তিনি জানালেন- তিনি পরিষ্কারভাবে মনে করতে পারছেন, একটি রুমের  কর্ণার থেকে তার রিসাক্সিটেশনের এবং সেই প্রমাণটাই ডাক্তারদের কাছে ক্রেডিবল এক প্রমাণ সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো। টেলিগ্রাফের সাথে সাক্ষাতকারে সাউথাম্পটনের ৫৭ বছর বয়সী ওই রোগীর প্রাণের পুরো স্পন্দন ও অনুভূতি উপস্থিত থাকার ব্যাপারে ড.পরিণা বলেন, ‘আমরা জানি হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ব্রেইন কোনো অবস্থাতেই আর কাজ করতে পারে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম সম্পূর্ণ বিপরীত একচিত্র। পুরোপুরি কনসাস অবস্থায় একজন এই অবস্থায় সম্পূর্ণ মৃত হওয়ার পরেও তিন মিনিট পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন।’ লোকটি জানায় রুমের ভেতরে কি হচ্ছে সে পুরোপুরি বুঝতে পারছে, এমনকি সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও সে মেশিনের দুটি বিপ শব্দ সম্পূর্ণরুপে শুনতে পান।

বিরতিকালীন সময়ের পরে, আমরা তখন শুধু মাত্র সময়কেই প্রাধান্য দিচ্ছিলাম, কাউন্ট করছিলাম, অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওই সময়ের ভেতরে যা ঘটেছিলো সে তাই বলেছিলো। বিশ্বের পনেরটি হাসপাতালের ২,০৬০ জন রোগীর ওপর (যাদের মধ্যে ১৪০ জন বেঁচেছিলেন) গবেষণা পরিচালনা করে এই নতুন তথ্যে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে ইউএস, ইউকে, অস্ট্রেলিয়ার হাসপাতাগুলো অংশগ্রহণ করেছিলো এবং তাদের এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে নতুন এই স্টাডিটি রিসাক্সিটেশন জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

মৃত্যুর একদম কাছাকাছি অবস্থান থেকে যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে শতকরা  ৪৬ ভাগ ব্যক্তি বড় অনেক কিছু মনে করতে পেরেছিলেন এবং দুই পার্সেন্ট একেবারে সজাগ ও পুরোপুরি সব কিছু দেখেছিলেন, শুনেছিলেন সেই মুহূর্তগুলো- রিসার্চে এমনটাই  ডাটা সন্নিবেশিত আছে। অবশ্য ড. পরিণা বলছেন তাদের পাওয়া নতুন এই তথ্য এবং আবিষ্কার অবশ্যই আরো গবেষণার দাবি রাখে কোনোরূপ পূর্ব পরিকল্পিত ধারণা ব্যতিরেকে। এ ব্যাপারে জার্নালের (যেখানে মূলত এই রিসার্চ প্রকাশিত হয়েছে) প্রধান সম্পাদক জেরি নোলান বলেন, গবেষক দল তাদের এই নতুন স্টাডির জন্য অভিনন্দনযোগ্য এবং এ ব্যাপারে বলা যায় জ্ঞানের এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছে, যাতে এ নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে করে জানা যাবে আমরা যখন মৃত্যুবরণ করি তখন আসলে কি ঘটে।