মুজিবনগরে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলন মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে উৎকোচ গ্রহণসহ অনিয়মের অভিযোগ

 

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে অর্থ উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধাসহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মেদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, ৬ সদস্য বিশিষ্ট মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির সদস্যরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ- সভাপতি, জেলা ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হোসেন জামুকার প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বিশ্বাস উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী জেলা কমান্ডারের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার (সদস্য) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমায়েত উদ্দীন সদস্য সচিব।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে উপজেলাব্যাপী মাইকিং করে বাছাই কমিটি। এতে প্রায় সাড়ে ৬শ’ টেবিল দরখাস্ত পড়ে। আবেদনকারীদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করে দেয়ার নামে তাদের নিকট থেকে নগদ অর্থ ও ছাগল উপঢৌকন নেয়া হয়েছে। এ জন্য এলাকায় বেশ কিছু দালাল নিযুক্ত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক ইউপি সদস্য সোনাপুর গ্রামের সাবদার ঘানী, ভবরপাড়ার আব্বাস আলী, শিবপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম ও পিজু মিস্ত্রি, সোনাপুর নতুনপাড়ার আব্দুল গফুর, থানার সামনের আব্বাস আলীসহ অনেকে। এসব দালালরা ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলে মুজিবনগরে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুজিবনগরবাসীর প্রত্যেককে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেয়ার নাম করে নগদ টাকা ও পশুগ্রহণ করে যাচাই-বাছাই কমিটির মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি থেকে ১৭ মে পর্যন্ত যাচাই-বাছাই চলে। এতে যারা নগদ অর্থ দিতে পারেনি তাদের নামে অভিযোগ তুলে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। যেমন সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুর রউফ বাদ পড়েছেন। পরবর্তী সময়ে অনলাইনে আবেদনকারী ১৫২ জনের মধ্যে থেকে অর্থের বিনিময়ে ৬৯ জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়। জামুকা থেকে প্রেরিত ২৪ জনের মধ্য থেকে ১৩ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিবার্তায় নাম থাকা সত্বেও নগদ অর্থ দিতে না পারায় জামুকা প্রেরিত নামের তালিকা থেকে কাজী জামালউদ্দিন ও মৃত জমিরউদ্দিনের নাম বাদ পড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, জেলা অর্থ কমান্ডার সিরাজউদ্দিন, দফতর কমান্ডার চাঁদ আলী, আফজাল হোসেন, আব্দুর ছাত্তারসহ মুজিবনগর উপজেলার তালিকাভুক্ত ও অনলাইনে আবেদনকৃত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। তারা জানান, পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের কোরআন তেলাওয়াতকারী মুজিবনগর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক (অবসরপ্রাপ্ত) বাকের আলী টাকা না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।

অভিযোগকারীরা বলেন, জামুকা প্রতিনিধি ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হোসেন মুক্তিযোদ্ধা করে দেয়ার নামে মরহুম ছাবের আলী ও খাতের আলীর পরিবারের নিকট থেকে দুটি খাসি গ্রহণ করেন যা পরবর্তীতে ফেরত দিয়েছেন। এভাবে দালালদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন জনকে মুক্তিযোদ্ধা করে দেয়ার নামে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তীতে যারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি তাদেরকে চাপের মুখে গৃহীত টাকার একটি অংশ ফেরত দিয়েছেন। বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হওয়ার পর তা নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও নোটিশ বোর্ডে তা টানানো হয়নি। এক্ষেত্রে বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধারা আপিল করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আমিন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলমসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।