মুখ খুলেছে সেই সাফাত সাদমান

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর বনানীর অভিজাত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি কবুল করলেও ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণের বিষয়ে মুখ খুলছে না গ্রেফতার সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ। এ বিষয়টির সুরাহার জন্য সাফাত আহমেদের বডিগার্ড আবুল কালাম আজাদ, গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও অপর ধর্ষক নাঈম আশরাফকে প্রয়োজন বলছে পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদের গ্রেফতার করতে পারলে অনেক অস্পষ্ট বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। অন্যদিকে স্পর্শকাতর এ মামলার তদন্তের প্রয়োজনে দ্য রেইন ট্রি হোটেলের মালিক মাহির হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এরই মধ্যে গতকাল মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি দল রেইন ট্রি হোটেল পরিদর্শন করেছে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার একটি বাড়ি থেকে সাফাত ও সাকিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে আর সাদমান সাকিফের বাবা রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অভিজাত রেস্তোরাঁ ‘পিকাসো’ ভবনের মালিক। শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ইসমত আরা এমি গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাফাতকে ৬ দিন এবং সাকিফকে ৫ দিন রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন। তাদের মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, ২৮ মার্চ রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনার সময় উপস্থিত দুই ধর্ষিতার বন্ধু শাহরিয়ার আহমেদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। একপর্যায়ে শাহরিয়ার আহমেদকে সাফাতের মুখোমুখি করা হয়। শাহরিয়ার পুলিশকে বলেন, সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার দুই ধর্ষিতা বান্ধবীর আমন্ত্রণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ওই দিন সাথে তার গার্লফ্রেন্ডও ছিলো। সেদিন তার গার্লফ্রেন্ডকেও নির্যাতন করতে চেয়েছিলো ধর্ষক সাফাত ও নাঈম। এ ক্ষেত্রে বেশি আগ্রাসী ছিলো নাঈম। তিনি বলেন, ‘এ সময় আমি ও আমার ধর্ষিতা বান্ধবী সাফাত ও নাঈমের পা জড়িয়ে ধরে তাকে নষ্ট না করতে অনুরোধ করি। সাফাত আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছিলো বলে আমার গার্লফ্রেন্ড ধর্ষিত হয়নি। তবে আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছিলো সাফাত, সাকিফ ও নাঈম। মাথায় পিস্তল ধরে উল্টাপাল্টা স্বীকারোক্তি আদায় করেছিলো। ’ একপর্যায়ে শাহরিয়ারকে সামনে রেখে সাফাত ও সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাহরিয়ারকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে সাফাত। চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণ মামলার চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত সহায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন।

এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ধর্ষণের ভিডিওচিত্রের ব্যাপারে মুখ খুলছে না গ্রেফতার দুজন। তবে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে ঘটনার সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত রয়েছে এমন অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। তিনি বলেন, এখনো ধরা পড়েনি এমন তিন আসামিকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য একাধিক টিম কাজ করছে। শিগগিরই হয়তো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত, দুই শিক্ষার্থীর সাথে ধর্ষকদের পরিচয় কীভাবে, হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কে আমন্ত্রণ করেছিলো, ধর্ষণের বিষয়টি কি তাদের পূর্বপরিকল্পিত, নাকি তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত, কেন ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়, কে ভিডিও করেছিলো, কার কী ভূমিকা ছিলো এসব বিষয়ে গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে তারা। তবে অনেক কিছুই এড়িয়ে যাচ্ছে।