মিল মালিকদের কারসাজিতে অস্থির কুষ্টিয়ার চালের বাজার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধ: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর বেশ কিছুদিন ধরেই অস্থির হয়ে উঠেছে। এ অস্থিরতার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। সম্প্রতি চালের বাজার অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেশকিছু চালকল মালিক অধিক মুনাফা লাভের আশায় পরিকল্পিতভাবে বাজার অস্থির করছে। বিপুল পরিমান ধান মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। সারাদেশে বেশকিছু মিল মালিক এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কুষ্টিয়াতে রয়েছে প্রায় অর্ধশত মিলারের নাম। যাদের গুদামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ ধান। তবে সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে অটো মিল মালিকরা বলছেন, ধান সংকট আর বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

কয়েক মাস ধরেই দেশে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। পাইকারী বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারেও সমানতালে বাড়ছে চালের দাম। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে প্রায় সব রকমের চাল কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা করে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, কতিপয় মিল মালিক কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করছে। একই অভিযোগ ক্রেতাদেরও।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কুষ্টিয়ায় ৫শ মিলের মধ্যে ৭০টি মিলে চালের অস্বাভাবিক মজুদের প্রামাণ মিলেছে। এর মধ্যে ৫০টি হাস্কিং এবং ২০টি অটোমেটিক রাইস মিলের নাম রয়েছে। এসব মিলে প্রায় ১০ লাখ টনেরও বেশি ধান মজুদ রয়েছে। যদিও সরকারি হিসাবের বাইরে মজুদের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ। যারা অতিমাত্রা চালের মজুদ করছে তাদের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে রশিদ অ্যাগ্রো ফুডের নাম। এরপরই রয়েছে যথাক্রমে বিশ্বাস অ্যাগ্রো ফুড, দাদা রাইস মিল, স্বর্ণা রাইস মিল, বেপারী এবং থ্রি স্টার রাইস মিলের নাম। রশীদ অ্যাগ্রোতে মজুতের পরিমাণ দুই লাখ ৫০ হাজার টন, বিশ্বাস অ্যাগ্রো ফুডে রয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার টন, স্বর্ণা রাইস মিলে রয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টন, দাদা রাইস মিলে রয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টন, বেপারী রাইস মিলে ১৬ হাজার টন এবং থ্রি স্টার রাইস মিলে মজুদের পরিমাণ ১৯ হাজার টন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ জানান, মিল চালু রাখার জন্য মালিকরা ধান ক্রয় করে রাখে। যার মিলের যতোটুকু ধারণ ক্ষমতা আছে তারা সেই পরিমাণ ধান মজুদ করে। পরবর্তী সময়ে মিল চালু রাখার জন্য মিলারদের ধান মজুদ করতেই হবে, তা না হলে মিল চালু রাখা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও রশীদ অ্যাগ্রোর মালিক আব্দুর রশিদ জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কারও পক্ষেই সম্ভব না। সরকারকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। ব্যবসায়ী বা মিলারদের দোষারোপ করে সমস্যার সমাধান হবে না। দেশের কোনো মিল মালিক ধান মজুদ করে না। সরকারের কোনো সংস্থা তদন্ত করে যদি প্রমাণ করতে পারে মিলাররা মজুদের সাথে জড়িত, তাহলে যে শাস্তি দেয়া হবে মিলাররা মেনে নেবে। ভারত থেকে আমদানি করা চাল অত্যন্ত নিম্নমানের। খাদ্য চাহিদা মেটাতে সরকারের এ উদ্যোগ কোনো কাজেই আসছে না। অন্যদিকে দেশে বন্যার কারণে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল নষ্ট হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ধান ও চালের বাজারে। এই পরিস্থিতিতে চালের বাজার কমার কোনো সুযোগ নেই। বরং আগামীতে দাম আরো বাড়তে পারে বলে দাবি করেন তিনি। কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভীর রহমান জানান, ধান ও চাল মজুদের রিষয়টি সর্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বড় মিলগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। কোনো মিলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধান-চাল মজুদ থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুষ্টিয়ার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল ৫২ টাকা, বাসমতি ৬২ টাকা ও আঠাশ চাল ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই বাজারে মিনিকেট চাল ৫৫ টাকা, বাসমতি ৬৫ টাকা ও আঠাশ চাল ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, সম্প্রতি ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ধানের দামের সাথে চালের দামের সামঞ্জস্য নেই। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণেই চালের দাম বেড়ে গেছে। ফ্রেশ অ্যাগ্রো ফুডের মালিক ওমর ফারুক জানান, বাজারে ধানের সংকট রয়েছে। তাছাড়া কৃষকের ঘরে যে ধান রয়েছে তা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে ধানের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। আর ধানের বাজার বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজারও উঠতির দিকেই থাকবে। নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত বাজার নিম্নমুখী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।