মানসম্পন্ন নকশা ও পরিকল্পনায় ইকোপার্ক নির্মাণের দাবি : আলমডাঙ্গায় অবৈধ দখলমুক্ত ৫২ বিঘা সরকারই জমিতে ডিসি ইকোপার্কে চলছে মাটি ভরাটের কাজ

 

রহমান মুকুল: আলমডাঙ্গার জামজামিতে অবৈধ দখলমুক্ত ৫২ বিঘা সরকারই জমিতে ডিসি ইকোপার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। চলছে মাটিভরাটের কাজ। নিষ্ঠার সাথে এই নির্মিতব্য ইকোপার্কের কাজ নিয়মিত দেখভাল করছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান। ইতোমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ ও জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস ইকোপার্কের স্থান পরিদর্শন করে গেছেন। জেলা প্রশাসকই ইকোপার্ক তৈরির জন্য জামজামির সোহাগপুর গ্রামলাগুয়া যমুনা মাঠের এই স্থানটা আদর্শ জায়গা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন বলে জানা যায়।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রাম সংলগ্ন যমুনা মাঠে ৫২ বিঘা সরকারি জমি এতোদিন স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের দখলে ছিলো। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ওই জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেন। অবৈধ দখলমুক্ত বিস্তীর্ণ জমিটি জেলা প্রশাসকের মনপূত হয়। তিনি এখানেই ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। নামকরণ করেছেন ডিসি- ইকোপার্ক। ইতোমধ্যেই ইকোপার্কের স্থানে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। এতো দ্রুত ইকোপার্কের কাজ শুরুর বিষয়টি আসলে প্রশাসনের আন্তরিকতার গাঢ়ত্বের পরিচায়ক বলেই ভাবছে এলাকাবাসী। কিন্তু কেমন ইকোপার্ক চান এলাকাবাসী? যাদের জন্য প্রশাসনের এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ, তাদের মতামতটা তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

নির্মিতব্য পার্কের নিকটবর্তী গ্রাম ভোদুয়া। এই গ্রামের বাসিন্দা পান্না চৌধুরী বলেন, পার্ক চত্বরের রাস্তার জন্য আলাদাভাবে মাটি আনারও প্রয়োজন নেই। পার্কের মধ্যেই তৈরি হওয়া লেক খননের মাটি দিয়েই সম্ভব হবে রাস্তা নির্মাণের কাজ। রাস্তাতে সুসজ্জিত টাইলস বসাতে পারলে সুন্দর হতো। পার্কের ভেতরে থাকবে খড়-বাঁশের তৈরি ছোট ছাতার আকারে অনেকগুলো ঘর। যেখানে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া থেকে বিশ্রাম সবই চলবে। পার্কের রাস্তার দুপাশে ছোটো ছোটো নারকেল গাছের পাশাপাশি থাকবে সৌরবিদ্যুত চালিত ত্রিফলা আলোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো। থাকবে বাগান। তাছাড়া এই প্রস্তাবিত ইকোপার্ক লাগোয়া গ্রামবাসীর উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে।

নাট্য ব্যক্তিত্ব ডাক্তার অমল কুমার বিশ্বাস বলেন, পার্কের প্রকল্পিত জমির মধ্যেই থাকতে হবে একটা থিয়েটার। যেখানে সৌরশক্তির সাহায্যে লাইভ স্টেজের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হবে। শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি আতিকুর রহমান ফরায়েজী বলেন, চিনের মহাপাঁচিল, মিশরের পিরামিড, ভারতের তাজমহলসহ সপ্তাশ্চর্যের রেপ্লিকা থাকতে হবে সেখানে। কেউ চাইলে চিনের পাঁচিলের ওপর দিয়ে হেঁটেও দেখতে পারেন। সপ্তাশ্চর্যের দেয়ালের গায়ে খোদাই করা থাকবে তার ইতিহাস। মানানসই ধ্বনি এবং আলোর ব্যবহারে তৈরি করতে হবে এমনই আবহ, যাতে দর্শকের মনে হয় তারা সত্যিই যেন বিভিন্ন দেশের গিয়েই কাঙ্ক্ষিত সপ্তাশ্চর্য দেখছেন তারা। আলমডাঙ্গা কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ জামসিদুল হক মনি বলেন, শিশু বিনোদনের যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। থাকতে হবে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড।

পরিকল্পনা নকশা প্রণয়ন: কিন্তু জনচাহিদাসম্পন্ন ইকোপার্ক নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান আসবে কীভাবে? অভিজ্ঞ অনেকেই মনে করেন যে, বাজেটের আগে ইকোপার্কের জন্য দরকার বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও স্বীকৃত নকশা। একটা প্রসিদ্ধ ফার্মকে দিয়ে নকশা তৈরি করাতে হবে। তারপর বাজেটের বিষয়।

এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহি অফিসার বলেন, এটা দীর্ঘ মেয়াদী কাজ। নকশা প্রণয়ন করা হয়নি। এখন কেবলমাত্র মাত্র মাটিভরাটের কাজ চলছে। প্রথমে মাটিভরাট ও বাউন্ডারি ওয়াল দিতে হবে। তাছাড়া তেমন বাজেট উপজেলা পর্যায়ে নেই। তবুও তিনি যতোটুকু সম্ভব চেষ্টা করছেন। জেলা প্রশাসক সহযোগিতা করবেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও আশ্বাস দিয়েছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জামজামি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তিনি সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাছাড়া এলাকার ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা নেয়া হবে। প্রশংসাযোগ্য কিছু করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি:  ইকোপার্ক নির্মাণের বিষয়টি আলমডাঙ্গাবাসীর জন্য সুখবরই বটে। এমনিতেই পিছিয়ে পড়া উপজেলা হিসেবে চিহ্নিত জেলার বৃহত্তর উপজেলা আলমডাঙ্গায় কোনো বিনোদনের স্থান নেই। নেই স্টেডিয়াম কিংবা ভালমানের অডিটোরিয়াম। সরকারি কোনো প্রকল্প তৈরির বিষয়টি আগে কখনও শোনা যায়নি। ফলে উপজেলাবাসীর মনে একটা হতাশা ছিলোই। ইকোপার্ক নির্মাণের খবর পেয়ে আশার আলো দেখছে বঞ্চিত এই উপজেলাবাসী। তবে সাথে রয়েছে আমজনতার ইচ্ছে পূরণের ক্ষেত্রে আশঙ্কার মেঘের ঘনঘটাও। আদৌ সম্পন্ন হবে তো এই ইকোপার্ক নির্মাণ প্রকল্প? এক্ষেত্রে সম্ভব হবে কি জনআকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতি বিধান করা?