মানবপাচারে থাই জেনারেল দোষী সাব্যস্ত

মাথাভাঙ্গা মনিরটর: থাইল্যান্ডে মানবপাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর এক জেনারেলসহ ৪৬ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজন রাজনীতিক ও পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন। দুই বছর আগে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে জঙ্গলে পাচারকারীদের পরিত্যক্ত শিবিরে গণকবরের সন্ধান মেলার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১০৩ জন আসামির বিরুদ্ধে বুধবার রায় ঘোষণা করছে থাইল্যান্ডের একটি আদালত।

রায়ের বিস্তারিত প্রকাশে আরও কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মানাস কংপেনের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংক্রান্ত আরও কয়েকটি অভিযোগের পাশাপাশি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দোষীদের কারও কারও বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্তঃদেশীয় অপরাধ, জোর করে আটকে রেখে মৃত্যু সংঘটন ও ধর্ষণের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। ব্যাংকক পোস্ট বলছে, মানবপাচারে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা মানাস থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ওই এলাকায় ছিলো মানবপাচারকারীদের ব্যাপক তৎপরতা, পাচারকারীদের এই নেটওয়ার্ক মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। জেনারেল মানাস পাচারকারীদের থেকে তিন কোটি ৫৬ লাখের (১৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন বাথ) বেশি টাকা নিয়েছিলেন বলে আদালতে উঠে আসে। বিনিময়ে তিনি পাচারকারীদের নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি এড়িয়ে সাগরের পাড় ধরে জঙ্গলের মধ্যে ওই সব শিবিরে যাওয়ার পথ বাতলে দিতেন। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কমান্ডের নেতৃত্বে আনা হয়েছিলো। বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ও-চা সে সময় দেশটির সেনাপ্রধান ছিলেন।

২০১৫ সালের মে মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখলা প্রদেশে পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত শিবিরে ৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের পর মানবপাচারের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালায় থাই সরকার। সে সময় গ্রেফতার করা হয়েছিলো এই আসামিদের। মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওই শিবিরে আটকে তাদের আত্মীয়দের কাছে মুক্তিপণ আদায় করা হতো বলে তদন্তে উঠে আসে।

দোষীদের মধ্যে অন্তত একজন, পাজুবান অংকাচোতেপান, আধুনিককালের এই দাস ব্যবসার অন্যতম হোতা বলে ব্যাংককপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়। ‘বিগ ব্রাদার টং’ নামে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সাতুন প্রদেশের এই রাজনীতিক এক সময় প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছেন। দণ্ডিত আরেক রাজনীতিক বান্নাকং পংফল সংখল প্রদশের পেদাং বেসারের সাবেক মেয়র। প্রতিবছর মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ (বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ও বাংলাদেশিরা) অবৈধ পথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে।

থাইল্যান্ড মানব পাচারের আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানুষ কেনা-বেচা, মানব পাচার ও দাস ব্যবসা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থাইল্যান্ড সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।