মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাতে তৈরি হচ্ছে পুনর্খননের প্রকল্প

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীসহ ১০টি নদীর কোমর ও বাঁশের সেতু অপসারণের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গাসহ ১০টি নদীতে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবী হাজার হাজার কোমর দিয়ে এবং বাঁশ দিয়ে ব্রিজ বানিয়ে মানুষ পারাপার করার ফলে নদীর অস্তিত হারাতে বসেছে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে মাথাভাঙ্গা নদীসহ অন্য নদীগুলো পুনর্খনন জরুরি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেছে সচেতন মহল।
চুয়াডাঙ্গা জেলার নদীগুলো হলো- মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা, চিত্রা, মাইশ্বর, কুমার, ভৈরব (আপার), কপোতাক্ষ/ভৈরব (লোয়ার), পারদুর্গা মরা নদী, করতোয়া ও ভাটই নদী অন্যতম। চুয়াডাঙ্গার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া থেকে দামুড়হুদার জয়নগর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা অংশে মাথাভাঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য ৭২ দশমিক ৬৪০ কিলোমিটার। মাথাভাঙ্গা নদীটি আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা-তালতলা গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দিয়ে বাঁশ দিয়ে ব্রিজ বানিয়ে মানুষ চলাচল করানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, হাতিকাটার আব্দুস সাত্তার বলেন, ওই সেতু দিয়ে শুধু গান শুনতে ওপারে যাই। আব্দুস সাত্তার নামে এক ব্যক্তি জানান, এই নদী দিয়ে নৌকা পারাপার করার কথা থাকলেও তা না করে বাঁশ দিয়ে মানুষ পারাপার করাচ্ছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তালতলার লাড্ডু জানান, তিনি প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে ৪ টাকার বিনিময়ে আসা-যাওয়া করেন। লিজগ্রহিতা তালতলার সুবাশ কুমার জানান, তিনি জেলা পরিষদ থেকে ২৭ হাজার টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য লিজ গ্রহণ করেছেন। নৌকা চলাচলের কথা থাকলেও বর্ষা এলে নৌকা ব্যবহার করা হয়। এ সময়ে পানি কম থাকায় বাঁশ দিয়ে মানুষ পারাপার করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, শুধু এই ঘাটেই নয়, পার্শ্ববর্তী অন্য ঘাটগুলোতেও বাঁশের ব্রিজ বানিয়ে মানুষ পারাপার করছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসেদুল হাসান মানু বলেন, হাজরাহাটি ও তালতলা এলাকায় ১৫০টির মতো মাছ ধরা কোমর রয়েছে। নদী বাঁচাতে এখনই কোমরগুলো অপসারণ করা দরকার। একই দাবি করেন, আলুকদিয়া ইউনিয়নের হাতিকাটার ইউপি মেম্বার মনোয়ার হোসেন। নিরাপদ সড়ক চাই চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন জানান, দেশের সহাসড়কে যানচলাচলে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে জনগণকে। একইভাবে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নদীপথে। নদী পথগুলোতে হাজার হাজার কোমর তৈরি করে মাছ শিকার বন্ধ করা ও বাঁশ দিয়ে সেতু অপসারণের জোর দাবি করছি প্রশাসনের কাছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মাথাভাঙ্গা নদীতে ১৩টি স্পটে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। তবে নামগুলো বলতে পারেননি কেউই। এই স্পটগুলো দিয়ে নৌকা পারাপারে কথা থাকলেও কেউ করছে কি-না বলতে পারেননি।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, নদীতে কোমর ও ব্রিজ অপসারণের কাজ জেলা প্রশাসনের। তবে নদী পুনর্খননের জন্য সার্ভে এবং প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। বিষয়টি একনেকে অনুমোদন হলেই পুনর্খননের কাজ শুরু করা যাবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার জানান, বিষয়টি নিয়ে জেলা জলমহল কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। নদীর পানি বাধাগ্রস্ত হয় এমন সবকিছু অপসারণে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর যেসকল কোমর ও বাঁশের সেতু রয়েছে তা অপসারণে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নদীর নাব্যতা ও গতিপথ সচল রাখতে সকল শ্রেণির মানুষকে এবিষয়ে সহযোগিতা করার কথাও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোলা নাথ দে প্রথমবারের মতো মাথাভাঙ্গা নদীতে কোমর অপসারণে সফল হয়েছিলেন। ওই সময় খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ পদক লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন ।