মাত্রাতিরিক্ত বিকিরণ ছড়াচ্ছে মোবাইল টাউয়ার

 

স্টাফ রিপোর্টার: মোবাইলফোন কোম্পানির টাউয়ারগুলো মাত্রাতিরিক্ত বিকিরণ ছড়াচ্ছে। এই বিকিরণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণ পেয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। একইসাথে দেশের সকল মোবাইলফোন অপারেটরের টাউয়ারগুলোর বিকিরণ নিয়মিতভাবে মনিটরিং করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। গতকাল বুধবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের ডিভিশন বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আদালত প্রতিবেদনটি এফিডেভিট আকারে দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয়। একইসাথে বিটিআরসি এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে তা আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে মোবাইলফোন কোম্পানিগুলোর টাউয়ারের বিকিরণ নিঃসরণের মাত্রা পরিমাপের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এক আদেশে মোবাইল টাউয়ারের বিকিরণ নিঃসরণের মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কয়েকটি মোবাইলফোন টাউয়ার পরিদর্শন করে বিকিরণের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।

নির্দেশ মোতাবেক মোবাইল টাউয়ারের বিকিরণের মাত্রা নির্ণয় করতে আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই কমিটিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি কর্তৃক স্থাপিত মোবাইল টাউয়ার থেকে বিকিরণকৃত রেডিয়েশনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পরিবেশের ক্ষতিগুলো নির্ণয় করতে বলা হয়। পরবর্তীকালে রেডিয়েশনের মাত্রা পরিমাপের জন্য একটি উপকমিটি গঠন করে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে আহ্বায়ক করে উপকমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিবকে সদস্য সচিব করা হয়। এই কমিটি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল টাউয়ার থেকে বিকিরত ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের মাত্রা পরীক্ষা করে। পরীক্ষাগুলো মোবাইলফোন কোম্পানিকে জানিয়ে এবং অনেকটা আকস্মিকভাবেই করা হয়। প্রাপ্ততথ্য উপাত্ত, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী রেডিয়েশনের নিরাপদ সীমা বিশ্লেষণ করে টেবিল আকারে তৈরি করে খসড়া প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ২০১৩ সালের ১৬ জুন বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আবশ্যক মোবাইলফোন টাউয়ার থেকে বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বাংলাদেশে নিজস্ব কোনো নীতিমালা এখনো হয়নি। ফলে উপরোক্ত প্রতিবেদনে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বিকিরণের নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়েছে।

সেই মোতাবেক বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে বলা হয়, উপকমিটি বিকিরণ পরিমাপকালে একটি মোবাইলফোন অপারেটরের একটি বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) এ মাত্রাতিরিক্ত বিকিরণ পেয়েছে। যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছয়টি অপারেটর কর্তৃক স্থাপিত বিটিএসগুলো পরীক্ষাপূর্বক বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার মধ্যে বিকিরণ নামিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিটিআরসিকে বলা যেতে পারে। নিয়মিতভাবে সকল মোবাইলফোন অপারেটরের বিটিএসএর বিকিরণ মনিটরিং করা এবং বিটিএস স্থাপন এবং এর টাউয়ার থেকে বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা বা গাইডলাইন দ্রুত প্রণয়ন করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে করতে সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। গতকাল হাইকোর্টে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী জিনাত হক। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিবেদনে বিকিরণের মাত্রা নিরূপণের জন্য যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ নেই। তাই তারা সুনিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না কী মাত্রায় বিকিরণ হচ্ছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি পরীক্ষা করার নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে মোবাইলফোনের টাউয়ারে বিকিরণের মাত্রা অনেক বেশি অর্থাৎ উচ্চমাত্রায় অবস্থান করছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মোবাইলে পর্যাপ্ত সিগন্যাল পৌঁছাতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো কিছুদূর অন্তর অন্তর একটু উঁচু টাউয়ার স্থাপন করে। যাতে চারপাশে একটা বড় এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসে।