মহেশপুর উপজেলায় জামায়াত ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ

 

নির্বাচন ২৭ ফেব্রয়ারি : চলছে শেষ মুহর্তের প্রচারণা

শাহনেওয়াজ খান সুমন ঝিনাইদহ থেকে: প্রথম দফায় ৪টি উপজেলায় নির্বাচনের পর দ্বিতীয় দফায় আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তিনটি পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের ১৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও দলীয় কোন্দল থাকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মন জয়ে মরিয়া হয়ে প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজার। নিজের সমর্থন নিশ্চিত করতে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা রকম আশ্বাস প্রার্থীরা। জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধ হবে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

ভারত সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা গঠিত ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ আর ভোটকেন্দ্র একশটি। ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে এ উপজেলার ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন পুরুষ ভোটার ও ১ লাখ ১০ হাজার ৭১ জন মহিলা ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গত সংসদ নির্বাচনে ১৯ দলীয় কর্মীরা মহেশপুরে ১৯টি কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় ভোট দিতে পারেননি অনেক ভোটার। সীমান্তবর্তী অবহেলিত মহেশপুর উপজেলার উন্নয়ন চান সাধারণ ভোটাররা। আর দরিদ্র মানুষের পাশে যে প্রার্থী দাঁড়াবেন তাকেই ভোট দিবেন বলে জানান ভোটাররা।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ময়জউদ্দিন হামিদ (আওয়ামী লীগ) দোয়াত-কলম প্রতীক, মো. আব্দুল হাই (জামায়াত) মোটরসাইকেল, এসএম শাহ জামান (বিএনপি) আনারস, মো. শাহনুর আলম (বিএনপি) কাপ-পিরিচ, মো. আল ইমরান (বিএনপি) হেলিকপ্টার ও মো. ওবাইদুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে এএম আব্দুল আহাদ (বিএনপি) তালা প্রতীক, নজীবউদ্দৌলা (স্বতন্ত্র) চশমা ও মো. আজিজুল হক (আওয়ামী লীগ) টিউবওয়েল প্রতীক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোছা. আশর্নাহার শিউলী (আওয়ামী লীগ) কলস প্রতীক, নুরজাহান বেগম (স্বতন্ত্র) পদ্মফুল, মোছা. নারগীস সুলতানা (বিএনপি) হাঁস, মোছা. হাসিনা খাতুন (জামায়াত) ফুটবল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের একক প্রার্থী থাকায় তারা ভোটের মাঠ দখলে সমানে সমান অবস্থায় রয়েছেন। হার-জিত এ দুটি দলের প্রার্থীদের মধ্যেই হবে বলে ভোটারদের ধারণা।  প্রার্থীর সমর্থনে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মাইকে ও মিছিলে শহর গ্রামাঞ্চল মুখরিত করে তুলছে সমর্থকরা। সেইসাথে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেকে যোগ্য দাবি করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা। সকল প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচারণা চালালেও অনেকটা গোপনে ভোট চাইছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। গত সংসদ নির্বাচনে যে নাশকতা হয়েছিলো এবার সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণ তার জবাব দেবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা।

নির্বাচনী এলাকার অলিগলি, রাস্তাঘাট ছেয়ে গেছে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে। তবে এখন পর্যন্ত আচরণবিধি ভঙ্গ বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটায় স্বস্তিতে আছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন  সহকারী রিটার্নিং অফিসার মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন।

ঝিনাইদহ রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, মহেশপুর উপজেলা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসন প্রস্তুত।

প্রসঙ্গত, গত সংসদ নির্বাচনে এ উপজেলার ১৯টি ভোটকেন্দ্র আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ১৯ দলীয় জোট নেতা-কর্মীরা। বর্তমানে এখানকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসব বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারাও আশাবাদী বলে অনেক ভোটার জানিয়েছেন।