মহেশপুরে জালসনদে চাকরি নিয়ে বিপাকে ছাত্রলীগ নেতা ইয়াকুব আলী

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জালসনদে চাকরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ছাত্রলীগ নেতা ইয়াকুব আলী। জালসনদে চাকরির কারণে এখনো তার বেতন হয়নি। তবে তিনি জোর করে স্কুলের তহবিল থেকে ছয় হাজার টাকা করে গ্রহণ করছেন।

অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা ইয়াকুব আলী যে বিষয়ের ছাত্র, সেই বিষয়েরই শিক্ষক। গ্রন্থাগারিক বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে না পেরে জালসনদ দিয়ে মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি নিয়েছেন। আর এখন চাকরি বৈধ করতে নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি স্কুলে ক্লাসও নিচ্ছেন। পরীক্ষায় পাস করে ফাইল থেকে জালসনদটি গায়েব করে মূল সনদ প্রতিস্থাপন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এদিকে ছাত্রলীগ নেতার এই কুকর্মে ক্ষুব্ধ স্কুলের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ২০১১ সালের জুন মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মহেশপুর উপজেলার কদমতলা গ্রামের নাজির আলীর ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব আলী আবেদন করেন। এরপর ওই বছরের ৭ আগস্ট ইয়াকুব আলীকে নিয়োগ দেয় স্কুলকর্তৃপক্ষ। ৮ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে যোগদান করতে বলা হলে তিনি ১০ আগস্ট যোগদান করেন। সেখানে অন্যান্য সনদের পাশাপাশি গ্রন্থগারিক বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন মর্মে একটি সনদপত্র জমা দেন। যে সনদপত্র তিনি দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন মর্মে দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই সনদটি জাল। যোগদানের পর তার বেতন ছাড় করানোর জন্য সকল কাগজপত্র শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে ধরা পড়ে তার গ্রন্থগারিক সনদটি জাল। ফলে তার বেতন ছাড় করেনি অধিদপ্তর। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার কাছে জানতে চান। তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে জোর করেই চাকরিতে বহাল আছেন। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা হওয়ায় শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেয় নি বরং মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন দিয়ে যাচ্ছে। গোপনসূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা ইয়াকুব আলী জালসনদ সঠিক করতে চলতি বছর যশোর সিটি কলেজে গ্রন্থগারিক বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি নিয়মিত সেখানে ক্লাস করছেন। আবার স্কুল থেকেও বেতন নিচ্ছেন। তবে হাজিরা খাতায় তিনি স্বাক্ষর করেন না। স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে তিনি কোনো ছুটিও নেননি। আগামী ডিসেম্বরে তিনি পরীক্ষা দেবেন বলে সিটি কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছেন। শিক্ষকরা আরো জানান, তার এ অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া উচিত, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ইয়াকুব আলীর বেতন দেয়নি শিক্ষা অধিদপ্তর। আর বিশেষ কারনে তার চাকুরী বহাল রয়েছে। এর বেশি তিনি কিছুই বলতে পারবেন না বলে জানান। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইয়াকুব আলী তার বেতন না হওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বলেও জানান।