ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় মোদি-হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ে খুশি কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী সমাজ

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্যদিয়ে নিশ্চিত হলো কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। একই সাথে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন হয়েছে শিলাইদহে রবীন্দ্র ভবনেরও। শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরে যে পরিমাণ খুশি তার চেয়ে অনেক বড় প্রাপ্তি ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দু দেশের সরকার প্রধানের সমঝোতা স্মারকে সইয়ের মাধ্যমে।

এটি কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগোপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। জেনে রাখা দরকার সরকার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশ-ভারত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন সংলগ্ন প্রায় ৬শ একর জমির ওপর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতোমধ্যে ভারতের খ্যাতনামা আম্বানি টাটার মত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। শুধু ভারতই নয়, চীন এবং জাপানের মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশের প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে কুষ্টিয়ার স্থানীয় প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। গত বছরের ১১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এমন বিষয় আঁচ করতে পারলেও গত শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সমঝোতা স্মারকে সইয়ের মধ্যদিয়ে নিশ্চিত হয়েছে। আর এতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস কুষ্টিয়ার মানুষের। কর্মসংস্থান হবে, অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে এমন হিসেব নিকেশও কষতে শুরু করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আলমগীর হোসাইন জানান, এতদিন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্বপ্নের মত মনে হলেও আজ তা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে। এই অর্থনীতি বিশ্লেষক মনে করেন ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এর মধ্য দিয়ে এলাকার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কুষ্টিয়া তথা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার খবরে খুশি কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী সমাজ। কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন নজু মনে করেন ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে শুধু বিদেশি প্রতিষ্ঠানই নয়, দেশের তথা কুষ্টিয়ার অনেকেই এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সদর উদ্দিন জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে। কুষ্টিয়ার মানুষের বেকারত্ব দূর হবে।

ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কুষ্টিয়াবাসী খুশি হলেও খুঁশির কমতি নেই জেলার সংস্কৃতিক অঙ্গনেও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করায় এখানকার মানুষের মাঝে নতুন করে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। অবশ্য উন্মাদনার পাশাপাশি আক্ষেপেরও যেন কমতি নেই সংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবার শিলাইদহে শান্তিনিকেতনের আদলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় দারুনভাবে মর্মাহত হয়েছেন সংস্কৃতি প্রেমীরা। কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ্যাড. লালিম হক মনে করেন বঙ্গবন্ধু তথা তার সুযোগ্যা কন্যা শেখ হাসিনা যেখানে ঘোষণা দিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের আদলে শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুঠিবাড়িতে যে রবীন্দ্র ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন এজন্য আমরা খুঁশি। এ থেকেই হয়ত একদিন শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে পাব। তবে সব মিলিয়ে কুষ্টিয়ার সব মানুষের অনেক প্রাপ্তি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদির সফরে।