বিপদজনক ও প্রাণনাশের ঝুঁকিতে বসবাস করছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিস্টিলারি অফিসার কোয়ার্টার বাসিন্দারা

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিপদজননক ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দিনযাপন করছে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিস্টিলারির সরকারি বাসভবন ডিও কোয়ার্টারেররঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাসিন্দারা। ভবনগুলো বসবাসের অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে ভবনগুলো ভাঙা অথবা পরিত্যক্ত ঘোষণা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। ডিস্টিলারি অফিসাররা কোয়ার্টারগুলো সংস্কার অথবা পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য বেশ কয়েকবার আবেদন করলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন সময় কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের আবেদন কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ডিস্টিলারী কোয়ার্টার গুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা অথবা সংস্কার না করা হলে ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগে ঝরে যেতে পারে অসংখ্য প্রাণ। কিন্তু এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উদাসীন।

সরেজনেমিনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যন্ডা কোম্পানি নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসারদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাসবভবন ডিও লাইনে ডিও এবং ৪পরিদর্শকের জন্য মোট ৫টি ডিও কোয়ার্টার বরাদ্দ রয়েছে। যা ১৯৩৮ সালে নির্মিত। বর্তমানে কোর্টারগুলো সম্পুর্ণভাবে বসবাসের অনুপযোগী। কোয়ার্টারগুলোর ২-১টি কোয়ার্টার ইতঃপূর্বে দায়সারা ভাবে সংস্কার করলেও কোর্টারের ছাদ দিয়ে নিয়মিত পানি পরে পড়ে। ছাদ ভেঙ্গে ভেঙ্গে চুন চুড়কি পড়ছে। দীর্ঘদিন যাবত ঘরের মেঝে ও বাথরুম সংস্কার করা নই। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে পানি আসে, জানালাগুলোও সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘদিন। এছাড়াও বাকি কোয়ার্টার গুলো ১০/১২ বছর যাবত সংস্কার না করায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

কোয়ার্টার গুলো প্রতিটি কক্ষের ছাদ দিয়ে দেয়াল বেয়ে মেঝেতে পানি পড়ে, যার ফলে ছাদ ও দেয়ালসহ মেঝে নষ্ট হয়েছে। কয়েকটি কক্ষের দরজা/জানালা নাই, জানালা ও বারান্দার গ্রিল না থাকায় চোরের উপদ্রবও কম না। প্রত্যেকটি কোয়ার্টারের গোসলখানার ছাদ নষ্ট, ছাদ দিয়ে দেওয়াল বেয়ে পানি পড়ে এবং দরজা জানালা নাই মেঝেও নষ্ট। প্রতিটি কোয়ার্টারের উত্তর পার্শে ব্যবহার টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। এছাড়া পরিত্যাক্ত ভাঙ্গা চোরা বসবাসের অনুপযোগী কোয়ার্টার গুলোতে সাপের উপদ্রপ দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন আগে কয়েকজন স্টাফকে সাপের কামড়ের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিস্টিলারি কর্মকর্তা জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিও কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে কর্মকর্তাগণ ডিও কোয়ার্টারগুলো বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী বিধায় সংস্কার বা পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য ডিস্টিলারী কর্তৃপক্ষের বরাবর আবেদন করা সত্ত্বেও কোন সংস্কার বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন নাই।

ডিস্টিলারি অফিসার কাজী মাহমুদ হারুন জানান, সহকারী পরিচালক, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, চুয়াডাঙ্গা বিগত ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড দর্শনা, চুয়াডাঙ্গাকে বসবাস এবং ব্যবহার অনুপযোগী ডিও কোয়ার্টারগুলো দ্রুত সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করা অথবা গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কোয়ার্টার গুলো ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অফিসার অতিরিক্ত টাকায় বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।

কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন জানান, কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা এর নিয়ন্ত্রণাধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দর্শনা ডিস্টিলারিতে কর্মরত অফিসারদের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টার গুলো ঝুকিপূর্ণ হিসেবে মানতে নারাজ, তবে তিনি বলেন কোয়ার্টার গুলো অনেক পুরাতন। ফলে কোয়ার্টারগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের প্লানিং ডিভিশন বরাবর ৪টি ১০ তলা ভবনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। যাতে করে আমাদের সমস্ত শ্রমিক সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারে। প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়ন হলে নতুন ভবনে ডিস্টিলারি অফিসারদের জন্যও কোয়ার্টার বরাদ্দ থাকবে।