বিদ্রোহ দমনে কঠোর হবে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনের মাঠে একক প্রার্থী রাখাকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বিএনপি। এজন্য কাজও শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ডামি আর বিদ্রোহীদের আলাদা তালিকাও করা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার বাছাই শেষে বিদ্রোহীদের বসতে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হবে। আর ৯ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পর ১০ ডিসেম্বর থেকে বিদ্রোহ দমনে কঠোর হবে দলটি।
জানা গেছে, দলের মনোনয়ন দেয়া ২৩৫টি পৌরসভার মধ্যে শতাধিক পৌরসভায় বিদ্রোহপ্রার্থী শনাক্ত করেছেন বিএনপির নির্বাচন কাজের সাথে যুক্ত নেতারা। দলের মনোনয়ন না পেয়ে এলাকায় বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিতরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বিদ্রোহীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তাই সঙ্কট নিরসনে বিদ্রোহীদের সাথে শিগগিরই আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। রোববার প্রার্থী যাচাই-বাছাই শেষ হওয়ার পরেই বিদ্রোহীদের ডেকে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে। দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ডামি প্রার্থীও যদি বাছাইয়ে সময় বাদ পড়েন সেক্ষেত্রে বিদ্রোহী কাউকে সমর্থন দেয়া হবে। অন্যথায় ৯ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পর বিদ্রোহীদের মৌখিকভাবে অথবা চিঠি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানানো হবে। তাতে কাজ না হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিএনপির মধ্য সারির এক নেতা জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক সঙ্কটে পড়েছে বিএনপি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, বগুড়াসহ বেশ কিছু জেলায় ভোটে দাঁড়িয়ে গেছেন বিদ্রোহীরা। প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় প্রভাব ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ করেছেন অনেকে। সঙ্কট কাটাতে ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের আগে সব বিদ্রোহীকে বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পরেও অনেক স্থানেই বিদ্রোহ দমন সম্ভব হবে না বলে তাদের ধারণা, কিন্তু কৌশলগত কারণে ১০ ডিসেম্বরের আগে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তার মতে, ক্ষমতাসীনদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মাথায় রেখে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনেক পৌরসভাতে ডামি প্রার্থী রাখা হয়েছে। সেই প্রার্থীও পরে দলকে ঝামেলায় ফেলতে পারেন, তারাও বিদ্রোহ করতে পারেন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বিদ্রোহ দমনে কৌশল ঠিক করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আপিল নিষ্পত্তি শেষে বিদ্রোহীদের সাথে বসে প্রথমে, আশ্বাস এরপর ভয় দেখিয়ে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা হবে। এরপর দল থেকে বহিষ্কার করে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। একই বিষয়ে দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে আছেন এখনই তা বলা ঠিক হবে না। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরে বিএনপির কেউ যদি নির্বাচনের মাঠে থাকেন তাহলে বিদ্রোহী বলা হবে। কিন্তু সেই সময় বিদ্রোহী খুব একটা পাওয়া যাবে না। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য করা হতে পারে_ এমন শঙ্কা থেকে দলীয় সিদ্ধান্তেই কিছু ডামি প্রার্থী দেয়া হয়েছে। শেষ সময়ে তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করেন তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে দলের অপর একটি সূত্রের দাবি, দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এমন অনেক নেতা আছেন যারা শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেন। কারণ অনেক স্থানে লবিং তদবির এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখছে দলের হাইকমান্ড। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত অথচ সুযোগ্য কাউকে স্বতন্ত্র হলেও দলের সমর্থন দেয়া হবে। এমন হতে পারে বলে দাবি করেছেন এখন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত দাউদকান্দি পৌরসভার মেয়র প্রার্থী মো. নুরুল আমিন সরকার (নাঈম সরকার)। তিনি জানান, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আস্থাভাজন তিনি। স্থায়ী কমিটির এই নেতা তাকে মনোনয়ন দিতে হাইকমান্ডের কাছে বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সময়মতো সেই বার্তা না পৌঁছানো ও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে যুবদল নেতা কেএমআই খলিলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। পরে ড. মোশাররফের এক প্রতিনিধি দলের হাইমান্ডের সাথে দেখা করার পর সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করে বিএনপি। কিন্তু সেই সময়ে সুকৌশলে মোবাইলফোন বন্ধ রেখে খলিল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার দাবি শেষ পর্যন্ত দল খললিকে বসার নির্দেশ দিবে এবং স্বতন্ত্র হলেও তাকেই সমর্থন দিবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান জানান, দলের সিদ্ধান্তের বাইয়ে গিয়ে কিছু প্রার্থীর ভোটে দাঁড়ানো নির্বাচনের ফলে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।