বিএনপি নেতা হত্যার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত

ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ : ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হত্যার প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোটের ডাকে জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় হরিণাকুণ্ডু পৌর এলাকায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।

গতকাল বুধবার সকাল থেকেই জেলার ৬ উপজেলায় সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে হরতাল সমর্থকরা। সকাল ৮টার দিকে জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ মজিদের নেতৃত্বে শহরের মডার্নমোড় থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। শহরের আরাপপুরে ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীরা একটি মিছিল করে। এছাড়া কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও শৈলকুপা শহরেও হরতালের সমর্থনে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। হরতালে অভ্যন্তরীণ রুট ও দূরপাল্লার সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। আতঙ্কে শহরের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলেনি। নাশকতা এড়াতে শহরের মোড়ে মোড়ে র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন ছিলো।

এদিকে শহরের আরাপপুর, কুষ্টিয়া বাসস্ট্যান্ড ও ক্যাডেট কলেজের সামনে ৫টি ট্রাক ও দুটি টেম্পু ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা।

গত সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোটরসাইকেলযোগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি দখলপুর বাজারে ব্রিজের ওপর পৌঁছুলে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে তাকে বোমা মেরে ও উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করে। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। এ ঘটনার পর হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। এর সাথে হরতাল বা মিছিল-মিটিঙের কোনো সম্পর্ক নেই বলে পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ২৪ জনকে আসামি করে নিহতের বড় ছেলে সাইদুর রহমান পান্নু বাদী হয়ে হরিণাকুণ্ডু থানায় একটি মামলা দায়ের করে। তবে এ মামলায় এখনও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। উল্টো পুলিশ মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এদিকে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হত্যার ঘটনায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। নিহত আবুল হোসেনের ছেলে সাইদুর রহমান বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে হরিণাকুণ্ডু থানায় মামলাটি দায়ের করেন। হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম মামলা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন এজাহারে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাপাশহাটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জোয়ারদার এবং হরিণাকুণ্ডু পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুসহ ২৪ জন আসামি রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অন্যান্য আসামিদের নাম উল্লেখ করা যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।

এদিকে হত্যামামলার এজাহারে আ.লীগের দু নেতা মশিয়ার জোয়ারদার ও রিন্টুকে হুকুমের আসামি ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ্য করায় পুলিশ নানা রকমের ছলচাতুরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাতের আঁধারে বাদীর বাড়ি থেকে রেকর্ড হওয়া মামলার রিসিভ কপি আনার ঘটনা নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে। তবে ওসি মহিবুল ইসলাম জানান, রেকর্ড হওয়া মামলা নিয়ে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তবে মামলার সিরিয়াল পরিবর্তনের জন্য বাদীর বাড়ি থেকে রিসিভ কপি আনা হয়েছিলো।

উল্লেখ্য, গত সোমবার টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর বাজারে বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে বোমা মেরে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঝিনাইদহে ১৮ দলীয় জোট বুধবার ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীদের ঠেকাতে গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে হরিণাকুণ্ডু পৌর এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঝিনাইদহ জেলাব্যাপি ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার হরতাল আহ্বান করা হয়। উপজেলা শহর হরিণাকুণ্ডুতে দূরপাল্লার যানবাহনসহ স্থানীয় কোনো প্রকার যন্ত্রচালিত পরিবহন রাস্তায় চলাচল করেনি। যে কারণে জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টানা চতুর্থ দিনের মতো বন্ধ থাকে। পরিবহন চলাচল না করতে পারায় সরকারি লালন শাহ কলেজ, সালেহা বেগম মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত না হতে পারেনি। বিভিন্ন দপ্তরে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো অপ্রতুল। ব্যাংক-বীমায় লেনদেন ছিলো অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক কম। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে একটি অজানা শঙ্কা বিরাজ করছিলো। শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সোমবার রাত থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করায় হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো পিকেটার রাস্তায় নামতে পারেনি।